মামী তার ভাইদের দিয়ে যৌন নির্যাতন করাতো

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৯ পিএম

এক বছর ধরে গৃহে আটকে জোরপূর্বক প্রবাসী স্বামীর কিশোরী ভাগ্নিকে গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে মামীর বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে কিশোরীটির ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে মামীর নেশাগ্রস্থ দুই ভাই ও তাদের বখাটে বন্ধুরা। এসবে সম্মত না হলেই তার উপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে পালিয়ে আসে কিশোরীটি।

এ ঘটনায় বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামী লিপি বেগম (৪০) ও তার ভাই নান্নু তালুকদারসহ চারজনকে আসামী করে মামলা করেছেন নির্যাতিত কিশোরীর মা রোকেয়া বেগম (মামলা নং ৪৯০/১৮)। দুই কার্য দিবসের মধ্যে মামলা গ্রহণ করে এফআইআর রেকর্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তালতলী থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন আদালত। অথচ আদালতের নির্দেশ মেনে মামলা গ্রহণ না করে উপরন্তু অভিযুক্তদের পক্ষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। এসব অভিযোগ নির্যাতনের শিকার কিশোরী ও ভুক্তভোগী বাবা-মায়ের।

তবে, তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান, এ বিষয়ে কেউ কখনো থানায় মামলার জন্য আসেনি। তিনি আরও বলেন, আদালতের আদেশে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

ঘটনাটি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামের প্রবাসী ইসমাইল তালুকদারের বাড়ির। ইসমাইল তালুকদারের ভাগ্নি নির্যাতিত ওই কিশোরীর বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায়। তার বাবা দিনমজুর। দারিদ্রের কারণে একমাত্র কিশোরী কন্যার লেখাপড়া চালাতে অসামর্থ হওয়ায় মামীর অনুরোধে পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে মামার বাড়িতে লেখাপড়া করাতে পাঠিয়েছিলেন নির্যাতিতার দরিদ্র বাবা-মা।

কথা ছিলো কিশোরী কন্যাকে লেখাপড়া করিয়ে ভাল পাত্র দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন মামী।

এ বিষয়ে নির্যাতিত কিশোরীর মা রোকেয়া বেগম বলেন, তার ভাই ইসমাইল তালুকদারের স্ত্রী লিপি বেগম একজন খারাপ চরিত্রের মানুষ। লিপি বেগমের ভাই নান্নু তালুকদার ও রাসেল তালুকদার বখাটে ও নেশাগ্রস্ত। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক বাণিজ্যসহ নানা অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নিলে হামলা, মামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে তারা। তাদের ভয়ে একরকম ভীতসন্ত্রস্থ সময় পাড় করছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবার।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী জানায়, ‘মালয়েশিয়া প্রবাসী তার মামা ইসমাইল তালুকদারের বাসাটি মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। তার মামী লিপির সাথে মাদকসেবীদের রয়েছে অবৈধ সম্পর্ক। সে অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এসব ঘটনা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলা হবে।’

জানা যায়, নির্যাতিত ওই কিশোরীর মামা ইসমাইল তালুকদার মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের কাজ করেন। তার অনুপস্থিতিতে তারই বাড়িতে স্ত্রী লিপি বেগমের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে তারই দুই ভাই নান্নু তালুকদার ও রাসেল তালুকদার স্থানীয় নেশাগ্রস্থ বখাটে যুবকদের নিয়ে নিয়মিত আড্ডা জমাত। এক পর্যায়ে প্রবাসী ইব্রাহিম মিয়ার ওই বাড়ি স্থানীয় মাদকাসক্তদের অভয়াশ্রমে পরিনত হয়। বিভিন্ন সময়ে বখাটে ওই চক্রটি নির্যাতিত ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। যৌন নির্যাতনের এসব ঘটনা গৃহকর্ত্রী লিপি বেগমকে জানালেও তিনি কোন প্রতিকার না করে উল্টো মারধর করেন ওই কিশোরীকে। অনোন্যপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে গত ২৩ আগস্ট ঐ বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে যায় সে। তাকে পুনরায় আটক করে ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে বেদম মারধর করেন লিপি বেগম। এক পর্যায়ে মামাবাড়ি থেকে পালিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে চুরির ঘটনা সাজিয়ে দেয়া হয়েছে মিথ্যে অপবাদ। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়েরের পর অব্যাহত হুমকীতে রয়েছে কিশোরীর পরিবার।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিপি বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিবেশীদের ষড়যন্ত্র ও সহায়তায় ওই কিশোরী তার ঘরের বিভিন্ন মালামাল ও টাকা পয়সা চুরি করেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: