ফেসবুকে আসক্তি ডিজিটাল নেশা!

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:০৬ পিএম

মোহাম্মদ রনি খাঁ: আমাদের বর্তমান জীবনের যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ফেসবুক। এটি এখন শুধু যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়না। বরং এটি তারুণ্যের স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের মাধ্যম। যা সৃজনশীল মুক্তচিন্তা বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচিত হয়।

কিন্তু বর্তমান সময়ে সৃজনশীলতার পাশাপাশি আবার অনেক নোংরামি, অশ্লীলতা, ভাষা বিকৃতি-করণ, অপপ্রচার, মেধা ও সময়ের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন পোস্ট, স্ট্যাটাস, মন্তব্য, অসভ্য আলাপচারিতা, কুৎসিত ভাষার ব্যবহার, আইডি হ্যাকসহ বন্ধুদের সুদীর্ঘ তালিকা তরুণীদের মূল্যবোধকে পরাস্ত করে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফেসবুক আসক্তি একটি ডিজিটাল নেশা। কেননা নতুন প্রজন্ম ফেসবুকে লগ-ইন করলে আর বের হতে চায় না। অন্যান্য নেশার মতো ফেসবুক মানুষের কর্মব্যস্ততাকে ভুলিয়ে দেয়। হাজার মাইল দূরের থাকা বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা যায় ফেসবুক দিয়ে, কিন্তু সেই যোগাযোগে বন্ধুত্বের বাঁধন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন!

স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যন্ত ক্লাসে শিক্ষকের লেকচার না শুনে ব্যস্ত থাকে ফেসবুক নিয়ে, যা কোনো নতুন চিত্র নয়।

গ্লোবাল ডিজিটাল স্ট্যাটশটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফেসবুকে সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারী থাকার তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছে ঢাকা শহর।

ইদানিং ফেসবুকে কিছু ভাষার ব্যবহার, অশ্লীলতাকেও হার মানায়। ফেসবুক পরকীয়া থেকে শুরু করে প্রেম-ভালোবাসা কিংবা সকল অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রধান যোগসূত্রও বিবেচিত। এছাড়া অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও হয় এই ফেসবুক থেকেই। ফেসবুকে নতুন নতুন বন্ধু তৈরির মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হতে থাকেন।

আরেকটি বড় সমস্যা ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট। একজনের ছবি, পরিচয় ব্যবহার করে আরেকটি ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় তার অজান্তেই। অনেক সময় অ্যাকাউন্টটি থেকে এমন কিছু শেয়ার বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, যা পরে ওই ব্যক্তির জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফেসবুকসহ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে তরুণ ও কিশোর সমাজের। শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা। কিন্তু ফেসবুক অন্তর্জালে আবদ্ধ তরুণ ও কিশোররা। পড়াশোনা শেষে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তাও কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক। ভবিষ্যৎ চিন্তা বাদ দিয়ে তরুণ সমাজ ব্যস্ত ছবি শেয়ার, নতুন পোষ্ট দেওয়ায়। অনেক সময় নাওয়া-খাওয়া, ঘুমের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয় ফেসবুকে।

অতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কমে যাচ্ছে সংবেদনশীল অনুভূতি। রাজনৈতিক আলাপ, মতবিনিময়, নির্বাচনী প্রচারণার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক।

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে সহিংসতা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় উস্কানিমূলক পোস্ট, আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর শতাব্দীর ভয়াবহ হামলার ঘটনায় ফেসবুক পোষ্ট দায়ী বলেও মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং তার আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা ফেসবুকে নিজেদের মতামত তুলে ধরতেন।

বিবিসি সহ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের তুলনায় খুব দ্রুত এবং সহজে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে সম্ভব ফেসবুকে। তাই তারা সকল ধরনের আন্দোলনে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। ফেসবুকে একটি পোষ্টের মাধ্যমে একসাথে অনেক জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।

সময়ের প্রয়োজনে চাই ভিন্ন ধর্মী উদ্যোগ, চাই ফেসবুক ব্যবহারে সচেতনা। এক্ষেত্রে টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা বিস্তর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: