নারী দেহরক্ষীর গোপন জীবন

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৪ পিএম

ডেভিস। রাজপরিবারের সদস্য, এমনকি অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ৩০ বছরের পেশাজীবনে অনেক জিম্মি মুক্ত করেছেন এবং গোপন নজরদারি করেছেন।

কেমন ছিল সেই জীবন?

জ্যাকুইন বলছেন, 'যখন আমি প্রথম এই পেশায় আসি, তখন এটা ছিল পুরোপুরি পুরুষকেন্দ্রিক একটি জায়গা। তারা সবসময়ে চাইতো আমি যেন শুধু নারী বা শিশুদের বিষয়গুলো দেখভাল করি; যা ছিল খুবই অদ্ভুত। যেন তারা সবাই আমার বাবা।'

১৯৮০ সালে পুলিশ বিভাগে চাকরিতে যোগদান করার ক’দিন পরেই জ্যাকুইন বেসরকারি নিরাপত্তা খাতে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এটা তাকে নানা ধরণের কাজের সুযোগ দেবে বলে ভেবেছিলেন তিনি।

পেশাগত কারণে তিনি বিশ্বের নামীদামী পাঁচ বা ছয় তারকা হোটেলে থেকেছেন। তিনি বলেন, 'প্রতিদিনই ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করার পর জীবন উপভোগের সময় হয়ে উঠে না।’

এর বাইরে একজন দেহরক্ষীকে সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হয় তার ব্যক্তিগত জীবনে। 'আপনি হয়তো আট-দশ সপ্তাহ বাড়িতেই যেতে পারবেন না।'

যখন আগেভাগে পরিকল্পনা করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জীবনের ঝুঁকি দূর করতে হয়, তখন সেটি সিনেমা বা নাটকের চেয়েও নাটকীয় হয়ে ওঠে। অপহরণের শিকার কয়েকজন তেলকর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে নজরদারির অংশ হিসাবে ইরাকের রাস্তায় বোরকা পড়ে ঘুরতে হয়েছে বলে জানান জ্যাকুইন।

একটি উদ্ধার অভিযানের কাহিনী

'একবার আমাদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধাওয়া করেছিল এবং আমরা কাশ্মীরে ঢুকে পড়ি। কাশ্মীরের বিদ্রোহীরা পাকিস্তানি সেনাদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করলে আমরাও তার মধ্যে পড়ে যাই।' সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বিজনেস ডেইলির কাছে এমনি একটি ঘটনার বর্ণনা করেন জ্যাকুইন।

সদ্য বিবাহিত স্বামীর সঙ্গে পাকিস্তানে যাওয়া ২৩ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নারীকে উদ্ধার করতে নিজের দল নিয়ে পাকিস্তানে যান জ্যাকুইন। ব্রিটেনে তার মা খবর পান যে, পাকিস্তানে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তখন তিনি মেয়েকে উদ্ধারের জন্য জ্যাকুইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

যে ভিলায় তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, একরাতে জ্যাকুইন সেখানে প্রবেশ করে তাকে বিছানার সঙ্গে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা জানায় তাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, খেতে দেয়া হয়না এবং মারধর করা হচ্ছে। আমি তখন তাকে বললাম, আমি আবার আসবো এবং তোমাকে নিয়ে যাবো'- বলেন জ্যাকুইন। প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয় হঠাৎই একটা ফোন আসে জ্যাকুইনের কাছে। যেখানে তিনি জানতে পারে, তাদের পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে।

'এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ঘুষ দিয়ে আমরা বাড়িটির গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করি। এরপর সেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে পাহাড়ি পথ ধরে একটি গাড়িতে করে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু পাকিস্তানি আর্মি আমাদের ধাওয়া করে'-জ্যাকুইন বলেন।

তারপর ভারত হয়ে সেই মেয়েকে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনা হয় বলে জানান জ্যাকুইন।

জ্যাকুইন বলেন, ৩০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন অনেক নারী এই পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠছে, যদিও যুক্তরাজ্যে নারী দেহরক্ষীর সংখ্যা মাত্র ১০ জন।

জ্যাকুইন আরও বলেন, দেহরক্ষী হিসেবে যারা কাজ করবেন, তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তারা ক্লায়েন্টের বন্ধু নন। তাহলেই আপনার দৃষ্টি পরিষ্কার থাকবে আর যখন দরকার হবে, তখন আপনি ঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।'

&dquote;&dquote;

জ্যাকুইন ডেভিসের জীবন নিয়ে 'ক্লোজ' নামের একটি চলচ্চিত্র বানাচ্ছে নেটফ্লিক্স

দেহরক্ষী বলতে মানুষ বুঝে কালো চশমা পড়া কাউকে। বাস্তবে সেটা নাও মিলতে পারে, যোগ করেন জ্যাকুইন। বরং তার পোশাকের চেয়ে মস্তিষ্ক অনেক বেশি খাটাতে হয়।

হয়তো তাকে নামী রেস্তোরায় ক্লায়েন্টের সঙ্গে বসে খেতে হয়, বিখ্যাত ক্লাবে বিকালের নাস্তায় ঠিক পোশাকে এবং আদবকায়দার সঙ্গে চা খেতে হয়। বিশ্বের চলমান নানা বিষয়ে কথা বলার জন্য খোঁজখবর রাখতে হয়।

এই পেশার ঝুঁকির বিষয়টি উড়িয়ে দেননি জ্যাকুইন। কিন্তু তিনি বলেন, 'কোন চাকরি নিয়েই তো আর উদ্বেগে থাকা যায় না।'

জ্যাকুইন ডেভিসের এই জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনা করছে নেটফ্লিক্স।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: