ব্যবহৃত প্লাস্টিকের রপ্তানি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪৬ পিএম

মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পেট বোতল এখন আর ফেলার প্রয়োজন পরবে না। এ বোতল থেকেই তৈরি হচ্ছে ফ্লেক্স, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং দেশে আসছে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানি থেকে এখন বছরে ৬০০ কোটি টাকার মতো আয় হচ্ছে। 

তবে চলতি অর্থবছর এ খাতে রপ্তানির বিপরীতে সরকারি ভর্তুকি (নগদ সহায়তা) হ্রাস করায় উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

তারা বলছেন, বিপুল সম্ভাবনাময় এ খাতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর বদলে আরও কমানো হয়েছে, যা এ খাতে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী ও রপ্তানিকারকদের উপার্জনের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশ বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পেট ফ্লেক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএফএমইএ)। চিঠিতে শিল্পের ধরন ও রপ্তানিপণ্য বৈচিত্র্যকরণে এবং জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানি সহায়তার আগের হার অপরিবর্তিত রাখারও অনুরোধ জানানো হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিপিএফএমইএ সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, এ খাতে নগদ সহায়তার হার কমানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এটি করা হতে পারে। এজন্য আমরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছি। আশা করছি, এ খাতে নগদ সহায়তার আগের হার অপরিবর্তিত রাখা হবে।

সূত্র জানায়, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে চলতি অর্থবছর ৩৫টি খাতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে এবার পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি ভর্তুকি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে পেট বোতল-ফ্লেক্স থেকে উৎপাদিত পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পিএসএফ) রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার হার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গেল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখার অনুরোধ করে সম্প্রতি বিপিএফএমইএর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আমাদের রপ্তানিপণ্য খাতটি অন্যান্য রপ্তানি আয়ের বিপরীতে নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত খাতের মতোই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেশের পরিবেশ রক্ষায় সীমাহীন অবদান রাখছি এবং দেশের অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। এছাড়া এর সঙ্গে গোটা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল সরবরাহকারী ও শ্রমঘন শিল্প হিসেবে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমাজের অবহেলিত লক্ষাধিক হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল এবারও পেট বোতল-ফ্লেক্স খাতে রপ্তানি সহায়তা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু, তা কমিয়ে অর্ধেকে নামানো হয়েছে, যা আমাদের খুবই ব্যথিত করেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ, বাড্ডা, সাভারসহ সারা দেশে প্রায় ১৫০টি ছোটবড় কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে এ খাতে ৮০টি রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

চিঠিতে বিপিএফএমইএ বলছে, পিএসএফ প্রস্তুতকারকরা গোটা বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত পেট বোতল-ফ্লেক্সের মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহার করেন। কাজেই পেট ফ্লেক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্সরা নিরুৎসাহিত হয়ে ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ালে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। যার ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

বিডি২৪লাইভ/আরএইচ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: