যেভাবে মারা গেলেন আইয়ুব বাচ্চু
কিংবদন্তী ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন আইয়ুব বাচ্চুর ঘনিষ্ঠজন ও এলআরবি’র সদস্য শামীম।
শামীম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে অসুস্থবোধ করছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় আনা হয় তাকে। এরপর চিকিৎকরা জানান তিনি আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আইয়ুব বাচ্চুর। সকালে দিকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জনপ্রিয় এই শিল্পীর আরেক বন্ধু সংগীতশিল্পী নকিব খান জানিয়েছেন, তিনি খবর পেয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছেন।
এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর বহুদিনের ঘনিষ্ঠ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মইনুদ্দিন রাশেদ জানিয়েছেন তার সহকারী সকালে মগবাজারের বাসায় গিয়ে তাকে সকালে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এর পর তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পারিবারিক ও এলআরবির সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রাতে রংপুরে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাচ্চু। কনসার্ট শেষে বুধবার দুপুরে বাড়ি ফেরেন তিনি। বুধবার রাত থেকেই তিন অস্বস্তি বোধ করছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এই সঙ্গীতশিল্পীর। সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে তাকে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হন স্বজন ও রাশেদ। অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর আনুমানিক সকাল ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানা যায়, তিনি কিছুদিন আগেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন।
স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা নাজিম জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত (হার্ট এটাক) হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের রক গানের স্বাদ দিয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পী দীর্ঘ চার দশক ধরে সুরের আলো ছড়িয়ে গেছেন। এছাড়া গিটারের ছয় তারেও জয় করেছেন উপমহাদেশ।
আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এল আর বি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন।
তিনি দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ফিলিংসের মাধ্যমে সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু হয়।
দেশের গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। তার সফলতার শুরু দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে। তিনি বেশ কিছু বাংলা ছবিতে প্লে-ব্যাকও করেছেন।
এছাড়াও অসংখ্য অ্যালবামেও কণ্ঠ দিয়েছেন আইয়ূব বাচ্চু। এর মধ্যে ময়না, কষ্ট, প্রেম তুমি কষ্ট, দুটি মন, সময়, একা, পথের গান, ভাটির টানে মাটির গানে, জীবন, সাউন্ড অব, সাইলেন্স, রিমঝিম বৃষ্টি অ্যালবামগুলো উল্লেখযোগ্য।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গানগুলো হলো- ‘রূপালি গিটার’, ‘রাত জাগা পাখি হয়ে’, ‘মাধবী’, ‘ফেরারি মন’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘বার মাস’, ‘হাসতে দেখ’, ‘উড়াল দেব আকাশে’। ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি,’ ‘সেই তুমি কেন অচেনা হলে’, ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘মেয়ে ও মেয়ে’, ‘কবিতা সুখ ওড়াও’, ‘এক আকাশ তারা’ গানগুলো ঘুরেছে মানুষের মুখে মুখে।
আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
তার মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার রূপালি গিটারের এই শুণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: