আজ আমেরিকা যাচ্ছেন মাহবুব তালুকদার

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:১৭ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কশিমনার মাহবুব তালুকদারকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করতে আগেই নিষেধ করেছিলে ৩ জন কমিশনার। এছাড়া গত দুই কমিশন সভায় মাহবুব তালুকদার যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে সে সব সভায় তাকে বিবিধে এসব বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আলোচনা না করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন।

সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের দেয়া পাঁচটি প্রস্তাবই অসাংবিধানিক বলে মনে করেছে পুরো কমিশন। ফলে তাঁর প্রস্তাবগুলো কমিশন সভার এজেন্ডাভুক্ত করে উত্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। এরপর বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তুলে মাহবুব তালুকদার কমিশন সভায় কেন সেগুলো অসাংবিধানিক এবং গ্রহণযোগ্য নয় তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্য কশিনাররা।

সূত্র জানায়, কশিমনার মাহবুব তালুকদারকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করতে আগে নিষেধ করেছিলে ৩ জন কমিশনার সে নোটে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার একটি নোট অডি ডিসেন্টে লেখেছেন, সেটি ৩৬ তম কমিশন বৈঠকের কার্যপত্র অন্তর্ভুক্ত করতে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছে। এর একটি অনুলিপি ৩ কমিশনারকেও দিয়েছেন। এরই পেক্ষিতে মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাবনাগুলো যাতে কমিশন সভায় উপস্থাপনা করতে না দেওয়া হয়; এজন্য ৩জন নির্বাচন কমিশনার এক ও অভিন্ন চিঠি লিখে পৃথক পৃথক ইউওনোটের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেন।

ইউওনোটে আরও লিখা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে আইনানুগ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এটা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধানের আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণের অবকাশ নাই। প্রস্তাবিত প্রস্তাবনায় যে সকল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তার অনেকগুলোই সংবিধান এবং বলবৎ আইন বিধি-বিধদানের পরিপন্থি এবং উপস্থাপিত বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য নির্ভর নয়। তদুপরি প্রস্তাবনায় বহুলাংশে রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠির মতাদর্শের প্রতিফল ঘটেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা কমিশ সভায় আলোচনা করা যথাযথ হবে মর্মে মনে করা হল।

আরও বলা হয়, উল্লেখ্য যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং তার কার্য-পরিধি তফসিল ঘোষণার পূর্বেই নির্ধারণ করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা এ পর্যায়ে বিবেচনা করা যথাযথ হবে মর্মে মনে করি না। সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে তফসিল ঘোষণার পর বিষয়টি বিবেচনা করাই যথাযথ হবে।

এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদ সব কমিশনারকে জানান মাহবুব তালুকদারের প্রস্তাবনার কথা। তখন আমরা প্রস্তাবনাগুলো জানলাম এবং পড়ে দেখলাম। পড়ে দেখার পরে আমাদের মনে হয়েছে তাঁর সব প্রস্তাবই অসাংবিধানিক এবং আলোচনার যোগ্য নয়।’

কমিশনার রফিকুল আরও বলেন, এরপরে আমরা বিশেষ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মাহবুব তালুকদার স্যারকে অনুরোধ করলাম যে, স্যার এত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা না করার জন্য। কমিশন সভায় যেহেতু কমিশনাররা বাদে আরও অনেকে উপস্থিত থাকেন সেহেতু এগুলো নিয়ে শুধু আমরা পাঁচজন কমিশনার আগে আলোচনা করি। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কী করা হবে। কিন্তু তিনি কোনভাবেই আমাদের কথায় রাজি হলেন না। তিনি কমিশন সভায় এগুলো উপস্থাপন করবেন বলে অনড় অবস্থান গ্রহণ করলেন। এরপরে বাধ্য হয়ে আমরা বাকি তিন কমিশনার ১০ অক্টোবর তাঁর প্রস্তাবনাগুলোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি আন-অফিসিয়াল (ইউও) নোট প্রদান করি সিইসির কাছে। যাতে করে তাঁর প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে না দেওয়া হয় কমিশন সভায়। সেজন্য তা আর সভার এজেন্ডাভুক্ত করা হয়নি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ অক্টোবর কমিশন সভায় ঢুকেই মাহবুব তালুকদার তাঁর প্রস্তাবনাগুলোকে কেন কমিশন সভার এজেন্ডায় আনা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সিইসি স্যার তখন তাঁকে বলেন, ‘এজেন্ডায় না থাকলেও আপনি বিবিধ বিষয়ের মধ্যে পরে আলোচনার সুযোগ পাবেন। আগে অন্যগুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে যাক।’

কিন্তু একপর্যায়ে মাহবুব তালুকদার কোনভাবেই তাঁর বিষয়গুলো বাদে অন্যগুলো নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হননি। পরে তিনি পকেট থেকে একটি লিখিত নোট অব ডিসেন্ট বের করেন। এবং নোটটি পড়েই কমিশন সভা ত্যাগ করেন।

তার মানে তিনি ভেবেই গিয়েছিলেন যে, তিনি নোট অব ডিসেন্ট দিবেন এবং কোন আলোচনায় করবেন না। এখানে আমাদের কি-বা করার ছিলো? এরপর তিনি বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তুলে পুরো নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, মাহবুব তালুকদারের কয়েকটি প্রস্তাবনা অযৌক্তিক ও একটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসি অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি ইসির এজেন্ডায় আসার মতো প্রস্তাব নয়। সুতরাং তার প্রস্তাবগুলো অযৌক্তিক। তবে এ মতবিরোধের কারণে কমিশনে মতানৈক্য তৈরি হবে না।

কবিতা খানম বলেন, মাহবুব তালুকদারকে কমিশন বৈঠকে কথা বলতে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য বলা হয়েছিল । তিনি বিবিধ আলোচনায় এসব বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। নোট দিয়ে বের হয়ে গেছেন।

এদিকে, শনিবার (২০ অক্টোবর) ব্যাক্তিগত সফরে আমেরিকা যাচ্ছে নির্বাচন কশিমনার মাহবুব তালুকদার। মাহবুব তালুকদার ‘ব্যক্তিগত’ সফরে আজ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এমন সময় তিনি বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, যখন তিনি নির্বাচন কমিশনে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলম এরই মধ্যে তাঁর বিদেশ যাওয়ার চিঠি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব দপ্তরে পাঠিয়েছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনার আগামী ২০ থেকে ৩০ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এটা হবে তাঁর ব্যক্তিগত সফর। এ সময় তিনি দেশিয় মুদ্রায় আর্থিক সুবিধা পাবেন। থাকবেন মেয়ে মিসেস আইরিন মাহবুবের কাছে। ৩১ অক্টোবর তাঁর ফেরার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: