আলোচনা পণ্ড হয়নি এটাই অর্জন!

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১৮ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে  সরকারের সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে আপাতত কোনো সমঝোতা হয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা মনে করেন, দুই পক্ষই এখনো দুই মেরুতে আছে৷ তবে আলোচনা আরো হবে, পণ্ড হয়নি এটাই অর্জন৷

বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) রাত ১১টার পর সংলাপ শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন আলোচনা ‘‘ভালো হয়েছে'' বলে মন্তব্য কলরেও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট নন৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘আলোচনার দরজা খোলা আছে৷ তবে মূল দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচনী সরকার, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি সরকারের দিক থেকে৷

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে সাড়া দেননি৷ তিনি সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, সভা, সমাবেশ সবাই করতে পারবে৷

আওয়ামী লীগ কোনোভাবই সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে অনঢ় অবস্থা বজায় রেখেছে৷ তবে আলোচনা খোলামেলা হওয়ার দাবি করেছে৷ বিএনপির নেতাও বলেছেন, আরো আলোচনা হতে পারে৷

গণভবনে এই আলোচনায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন প্রধানন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন৷

আলোচনার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আহমেদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে আসলে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার কোনো দফা নিয়েই সমঝোতা হয়নি৷ সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করেও নির্বাচনে কারচুপি করা যায়৷ আর সরকার গ্রহণযোগ্য ও নিপেপেক্ষ নির্বাচনে সহায়তার কথা বলেছে৷ কিন্তু সেটা কিভাবে?''

তিনি আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের যে দাবি তাতে সরকার সাড়া দেয়নি বলেই মনে হয়েছে৷ ফলে আসলে এই সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে আপাত দৃষ্টিতে কোনো ফল আসেনি বলেই আমার মনে হয়েছে৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘দুই পক্ষের প্রাথমিক কথায় মনে হয়েছে আলোচনা আরো হবে৷ সেটা আশার কথা৷ বাংলাদেশে অতীতে সংলাপের মাধ্যমে কোনো সমাধান আসেনি৷ তবে ভবিষ্যতে যে আসবে না তা তো বলার সময় এখনো আসেনি৷ ৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে৷ তার আগে সব কিছু স্পষ্ট হবে আসলে কোন দিকে যাচ্ছে৷''

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনূ সজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংলাপ যে পণ্ড হয়নি এটাই সবচেয়ে বড় আশার কথা৷ তাড়াহুড়ো করে কিছু হবে না৷ যাঁরা মনে করেন হঠাৎ কিছু হয়ে যাবে, তাঁদের ভাবনা ঠিক নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রথমদিনের সংলাপে আসলে যে যার অবস্থানে ছিলেন৷ নতুন কিছু ঘটেনি৷ সংলাপে যে যার হোমওয়ার্ক তুলে ধরেছে, দাবির পক্ষে কথা বলেছে৷ আর সরকার তা তার মতো করে নাকচ করেছে৷ তবে আলোচনা যে আরো চলবে এটা একটা অর্জন৷ এর বাইরে এই সংলাপে আপাতত কোনো অর্জন নেই৷''

সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঐক্য জোটের মধ্যে সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি৷ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফাহরেনহোলজ দেখা করে জানান, ‘‘সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷'' তিনি আশা করেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত ভালো হবে এবং সবাই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷''

‘সংলাপ সফল হবে না'

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বৃহস্পতিবার রংপুরে বলেছেন, ‘‘ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির কোনোটিই মানা সম্ভব নয়৷ তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চান, সংসদ ভেঙে দিতে চান, এসব দাবির কোনোটিই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ ফলে সংলাপ ব্যর্থ হবে৷''

আরো যত সংলাপ

আরো অনেক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে সরকার৷ বিকল্প ধারার সাথে ২ নভেম্বর, ৪ নভেম্বর ১৪ দল আর এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে ৫ নভেম্বর৷ সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংলাপের দাবিতে চিঠি পৌঁছে দেয় সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং যুক্তফ্রন্ট নামে ৩৫ দলীয় অখ্যাত একটি রাজনৈতিক জোট৷

বুধবার জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বিএনএফ প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠায়৷ সব চিঠি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়৷

'৯০ পরবর্তী সংলাপ ও ব্যর্থতা

১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংসদে সরকারি দল বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের দুই উপনেতার মধ্যে বৈঠক হয়েছিল৷ তখনকার কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় এসে দুই নেত্রী  শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ কমনওয়েলথ মহাসচিবের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংলাপে দুই নেত্রী আনুষ্ঠানিক সম্মতিও দিয়েছিলেন৷ পরে সেটিও সফল হয়নি৷ পরে তারই বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিপৈনকে পাঠিয়েছিলেন৷

২০০৬ সালের অক্টোবরে তখনকার ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও তখনকার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী সংলাপ হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে৷ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯ দফা তুলে ধরা হয়৷ ওই সময় মান্নান ভূঁইয়া ও আবদুল জলিলের মধ্যে ছয় দফা বৈঠক হলেও সমঝোতা হয়নি৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপি৷ সংকট নিরসনে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো তিনবার ঢাকায় এসেছিলেন৷ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৬ দিন ঢাকায় অবস্থান করে দু' পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন৷ আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সরকার ও বিরোধী দলের বৈঠক হয়েছিল ১০ ও ১১ ডিসেম্বর৷ ওই দুই দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তারানকো৷ তৃতীয় বৈঠক হয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের উপস্থিতিতে৷ কিন্তু কোনো বৈঠকই সফল হয়নি৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: