শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা আদায়

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৪ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে বলে ছাত্রলীগের এক নেতা ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ।

বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মেস থেকে ডেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তিন ঘণ্টা জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় ওই দুইজনকে চিহ্নিত করা হয় এবং ভুক্তভোগীকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম ওমর ফারুক। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়।

অপরদিকে, জড়িতরা হলেন, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম এবং ফার্সী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউর রহমান। শাফি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। সে সোহরাওয়ার্দী হলে এবং নাঈম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরটী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী ওমর ফারুক বলেন, ‘গত দুই দিন থেকে নাঈম ভাই আমাকে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করাবে বলে বলছিলো। তার সঙ্গে গেলে সে আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে শাফির কাছে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমি শিবির করি বলে দাবি করে। আমি অস্বীকার করলে তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় ও লোহার পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে তারা সিনিয়র নেতাদের কিছু জানাবে না বলে জানায়। পরে তারা আমার পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা চাইলে আমার বড় ভাই বিকাশের মাধ্যমে বিশ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পেয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয় এবং বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকিও দেয়। পরে আমি বিষয়টি আমার জেলা সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমানকে জানাই। ঘটনাটি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু তাদের কাছ থেকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।’

বিষয়টি স্বীকার করে শাফি বলেন, ‘ফারুকের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা তাকে শিবির সন্দেহে আটক করি। তবে টাকা নেওয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। টাকা নাঈম নিয়েছে।’ এ বিষয়ে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সোহানুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত হয়ে গেলেও প্রক্টর কোন ব্যবস্থা নেননি।’

তবে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছে দাবি করলেও ঘটনাস্থলে কোন পুলিশকে দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পরে শুনেছি ছাত্রলীগ বিষয়টি সমাধান করেছে।’

জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া ও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হলে গিয়েছিলাম। টাকা আদায়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে পেরেছি। জড়িত দুইজনের মধ্যে যার কাছে টাকা সে পলাতক। আমরা একজনকে ধরেছি। তার মাধ্যমে আজ রাতের মধ্যেই ফারুককে টাকা ফিরিয়ে দেবো এবং ফারুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।

তারা বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের জন্য আমরা শাফিকে শোকজ করেছি এবং আগামী সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছি।’

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: