জানা থাকলে যে রেকর্ডটি ভাঙতে পারতেন মুশফিক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ এএম

শুধু দেশের হয়ে না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ইতিহাস গড়েছেন মুশফিকুর রহিম। দেশের হয়ে দুইবার দ্বিশতক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেট কিপার হিসেবে সর্বোচ্চ দুইবার দ্বিশতকের রেকর্ড গড়েছেন ডান-হাতি এই ব্যাটসম্যান। মিরপুরের মাঠেও দেশের হয়ে প্রথম দ্বিশতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান।

মুশফিক অনেক কঠিন কন্ডিশনে, কঠিন উইকেটে সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু একটা সেঞ্চুরি ছিল না মিরপুরে, যে মাঠটা হাতের তালুর মতো চেনা। অবশেষে এই অপূর্ণতা দূর হয়েছে। ভালোভাবেই দূর হয়েছে। মুশফিক শুধু সেঞ্চুরিই করেননি, অপরাজিত ২১৯ রানে। মিরপুরের মাঠে মুশফিকের চোখেমুখে তৃপ্তি।

মুশফিকুর রহিমের চিন্তার বাহিরে ছিল এই রেকর্ডটি। কিন্তু আরেকটু এগোলেই তো ওই রেকর্ডটাও নিজের অধিকারে নিতে পারতেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ ২২৬ রানের রেকর্ডটা আছে আজহার আলীর, ২০১৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিলেন। এত রেকর্ড যখন হলো, এটা কেন নিজের করে নেওয়া হয়নি?

সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বরেন, ‘যেকোনো অর্জন আপনার ভালো লাগবে। মিরপুরের মাঠে এটা ছিল আমার প্রথম সেঞ্চুরি। আমি মনে করি, যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য এটা বিশেষ। আমার মনে হয় না, বাংলাদেশে এমন কোনো ক্রিকেটার আছে যে বলবে মিরপুরে তার প্রথম সেঞ্চুরি স্পেশাল নয়। এখানে সেঞ্চুরি করে আমি গর্বিত, এই ইনিংস আমার কাছে স্পেশাল।’

মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হকের বড় ইনিংস, ৫০০ + স্কোর সবই এক সুতোয় গাঁথা। মানে সিলেটে ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণের পর এ ম্যাচে যেন ‘ধনুক ভাঙ্গা’ পণ করে নেমেছিল রিয়াদের দল-আমাদের যার যা সামর্থ আছে, তার সেরাটা উপহার দিতে হবে। তবেই জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। তাইতো ৫০০ + রান করে জয়ের নেশায় বুঁদ হওয়া।

তামিম-সাকিব ইনজুরির কারণে দলে নেই, তাই ব্যাটিংয়ের সব দায় দায়িত্ব বর্তেছে মুশফিক আর মুমিনুলের কাঁধে। যাদের আছে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য ও ইতিহাস। বাস্তবে তাদের দুজনার হাতেই এ ম্যাচে বাংলাদেশের সাফল্যের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে।

আগের দিন মুমিনুল তার বড় ইনিংস সাজানোর গল্প বলতে গিয়ে বার বার মুশফিকুর রহিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। বলেছিলেন , মুশফিক ভাই আমাকে গাইড করেছেন। প্রয়োজনীয় বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে বড় ইনিংস খেলতে সাহায্য করেছিলেন।

দ্বিতীয় দিন ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিকের কন্ঠে মুমিনুলের প্রশংসা। দিন শেষে বলেন, ‘ডাবল সেঞ্চুরি একা করা যায় না, বড় জুটি থাকা লাগে। শুধু আমি না, মুমিনুলও অনেক ভালো ব্যাট করেছে। মিরাজ আর রিয়াদ ভাইও ভালো খেলেছে। আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। সব মিলিয়ে ভালো লাগছে।’

সেই ভালো লাগা স্বার্থক হবে তখনই ,যখন দল জিতবে। খারাপ সময় কাটিয়ে আবার আলোয় ফিরতে ব্যাটসম্যানদের যা করে দেখানোর; মুশফিক, মুমিনুল, মিরাজরা তা করে দেখালেন। এখন বাকি কাজটা বোলারদের হাতে।

মুশফিকও তাই মনে করছেন, ‘আমাদের বোলারদের অনেক কাজ বাকি আছে। কারণ আমাদের বিশ উইকেট নিতে হবে। কাল প্রথম সেশনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম সেশনটা কাজে লাগাতে পারলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। আমাদের আসলে প্রথম ইনিংসের রান খুব দরকার ছিল। আর উইকেটও আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছে। 

আশার কথা, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পর মুশফিকুর রহিমও জয়ের স্বপ্নই দেখছেন। আর তাই তো খেলা শেষে ১৯ মিনিটের বেশি সময়ের প্রেস মিটে অনেক কথার ভীড়েও মুশফিকুর রহিমের মুখে এমন একটি কথা বেরিয়ে এসেছে, যার মধ্যেই পরিষ্কার ফুটে উঠেছে কি চেয়েছে আর কি করতে চাচ্ছে টাইগাররা।

‘আমাদের যেন আর দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে না হয়। এই জন্য প্রথম ইনিংসটা যত বড় করা যায় সেই চেষ্টা করেছি’ এখানেই আছে বাংলাদেশের লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও প্রত্যাশার কথা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এই উল্টো পাল্টা বলতে মুশফিক বুঝিয়েছেন উইকেট ভাঙ্গবে, কোথাও কোথাও বিশেষ পপিং ক্রিজের আশ পাশে বোলারদের বুটে ক্ষত সৃষ্টি হবে, তখন স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাটিং আরও কঠিন হবে। স্পিনাররা বাড়তি সাহায্য পাবেন। পড়ন্ত বিকেলে তাইজুলের বলই টার্ন করছিল। সামনের তিন দিনে উইকেট থেকে সাহায্য পেলে তাইজুল-মিরাজরা হয়ে উঠতে পারেন আরও ভয়ঙ্কর। আর তাতেই দুঃসময়ে আলোকবর্তিকার মত জয়ের দেখা মিলতে পারে বাংলাদেশের।

আর এই জয়টা পেলেই পূর্ণতা পাবে মুশফিক-মুমিনুলদের ব্যক্তিগত সাফল্যগুলো। একই সাথে জবাবও দেয়া হবে সেই সব সমালোচকদের, যারা বলছিলেন-বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পারে না। প্রমাণ হয়ে যাবে, মাঝে খাবি খেলেও আসলে টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজটা ধরে খেলতেও জানে টাইগাররা।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: