যে কোনো শর্তে মনোনয়ন নিশ্চিত চায় এমপি-মন্ত্রীরা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তবে একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেতে ডামি প্রার্থীদের হিড়িক দেখা গেছে। একই আসনে পিতা লড়ছে ছেলের বিপক্ষে আবার ভাইয়ের বিপক্ষে ভাই, এমন কী পিতার সঙ্গেও লড়াই করছেন মেয়ে। এছাড়া একই আসনে লড়ছে একই পরিবারের তিন সদস্য। দলের এমপি কিংবা মন্ত্রীর সমর্থনদের মধ্যে অনেকেই সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন। এরই মধ্যে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম একাধিক প্রার্থী সংগ্রহ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান জল্পনা।

মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারের সময় একাধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রীদের সমর্থন দেয়ার জন্যও নিজের দলের লোকজন দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করিয়েছেন অনেক এমপিরা। তাদের লক্ষ্য মনোনয়ন বোর্ডের মুখোমুখি হয়ে ডামি প্রার্থীদের সমর্থন পাওয়া। আবার নৌকার টিকেট মিস না করতে পরিবারের একে অপরের বিপক্ষে কিনেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম। কোন মতেই মিস করতে চাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের মনোনয়নের টিকেট, এমনটাই যুক্তি দিচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

গত শুক্রবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই মনোনয়ন বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে সংসদে থাকা এমপি ছাড়াও সাবেক এমপি, ছাত্রনেতা ও স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও নিয়েছেন মনোনয়ন। মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিন থেকে শুরু করে একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়ন বুথ গুলোতে দেখা গেছে ডামি প্রার্থীদের হিড়িক।

সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তার ভাই ড. একে আব্দুল মোমেন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম। সিরাজগঞ্জ- ১ আসন থেকে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় একই আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন।

ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার ছেলে সোলায়মান সেলিম একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। ঢাকা- ৫ আসনের হাবীবুর রহমান মোল্লা ও তার ছেলে সজল একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। চাঁদপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং তার ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ঝিনেদাহ-১ আসনে পিতার তৈয়ব আলী সর্দারের ছেলে নায়েব আলী সর্দার মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে আতাউর রহমান ও তার ছেলে আমানুর রহমান রানা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।

বরিশাল-৬ আসন থেকে একই পরিবারের তিন ভাই মনোনয়ন কিনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক অসীম এবং তার ভাই বুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জু ও ছোট ভাই এনামুল হক আবির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ থাকায় এ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা অন্যান্য আসনের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান, বর্তমান সংসদ সদস্যের ছেলে মশিউজ্জামান রোমেল সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) সংসদীয় আসনে একই পরিবারের তিন জন আওয়ামী লীগেরই মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদ মমতাজ উদ্দীনের ছোট ভাই ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, শহীদ মমতাজ উদ্দীনের সহধর্মিনী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (২০০৮) শেফালী মমতাজ, শহীদ মমতাজ ও শেফালী মমতাজের ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর। নাটোর-৪ আসন থেকে এবার নৌকার মাঝি হতে চাইছেন বাবা ও মেয়ে। শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে স্বশরীরে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তারা। নাটোর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

কুমিল্লা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন কিনেছেন বাবা, ছেলে ও মেয়ে। জেলা আওয়ামী লীগ প্রবীন নেতা আফজাল খান, তার পুত্র ও এফবিসিসিআই পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা।

কুমিল্লা-১ ও ৭ আসনের জন্য মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সাংসদ ও তার ছেলে। কুমিল্লা-১ আসনের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবং তার পুত্র মেজর মোহাম্মদ আলী মনোনয়ন ক্রয় করেছে। কুমিল্লা-৭ আসনে বর্তমান এমপি অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ ও তার ছেলে মনোনয়ন সংগ্রহ তরেছে।

এছাড়া কক্সবাজার-১ আসন থেকে মো: জাফর আলম ও তার স্ত্রী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে একই পরিবারের তিন ভাইবোন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের একজন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। সাংসদের বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলও বসে নেই। অন্যদিকে, তাদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরী। পাবনা-৪ আসন থেকে বাবা, মেয়ে এবং মেয়ের জামাই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। শামসুর শরীফ দিলু, মেয়ে মাহাজাবিন শিরিন পিয়া ও তার জামাই আবুল কালাম পিন্টু।

এ বিষয়ে নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এ এইচ আসলাম সানী বলেন, আসলে আমরা প্রায় সময়ই দেখি একটি আসন থেকে অনেক প্রাথী মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এই প্রাথী সংখ্যা বেড়ে যায় মূলত ডামি প্রার্থীর কারণে। ডামি প্রার্থী হলো তারাই যাদের আসলে এলাকায় কোনো জনপ্রিয়তা নেই কিন্তু তারা মনোনয়ন ফরম কিনেন আরেকজন প্রার্থীকে সুবিধা করে দেয়ার জন্যে। শক্তিশালী প্রার্থীরা নিজের টাকা খরচ করে আরো কিছু ডামি প্রার্থী বানায় যাতে করে মনোনয়ন বোর্ডের সামনে সে দেখাতে পারে যে ওই এলাকায় অন্যান্য প্রার্থীরাও তাকে সমর্থন করে। শক্তিশালী প্রার্থী ডামি প্রার্থী বানায় তার সুবিধার জন্যে। তারা সবাই মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন পায়িয়ে দেয়ার জন্যে।

বিডি২৪লাইভ/এসআই/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: