কেন টাক পড়ে, জানেন কি?

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম

প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট জীবনচক্র শেষ করে কিছু পুরনো চুল পড়ে যায় আর নতুন চুল গজায়। তবু প্রায় সব মানুষকেই বলতে শোনা যায়, মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল! কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে মাথা একেবারে ফাঁকা কখনোই হয় না। মাথার ত্বকের লোমকূপের কোনো সমস্যা, চুলের কোনো রোগ বা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থেকেই মাথা একেবারে ফাঁকা হয়। যাকে চলতি ভাষায় টাক পড়া বলে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু টাক পড়া নয়। নানা কারণে টাক পড়তে পারে। রয়েছে চিকিৎসাও। তবে টাক ঢাকতে বিশাল খরচ করে চুল প্রতিস্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

টাকের ব্যাপারে বুঝতে গেলে চুলের গোড়ার কথা একটু জানতে হবে। জন্মের সময় মানুষের মাথার ত্বকে প্রায় এক লাখ চুলের গোড়া বা হেয়ার ফলিকল থাকে। একটি চুলের জীবনচক্রের তিনটি দশা। প্রথম তিন বছর হলো অ্যানাজেন দশা। নতুন চুল বেড়ে ওঠার সময়। এর পর ২-৪ সপ্তাহের একটা স্বল্পস্থায়ী পর্যায় হলো ক্যাটাজেন। এর পর ৩-৪ মাসের টেলোজেন দশা শেষ করে চুল পড়ে যায়। আবার নতুন চক্রের চুল এসে শূন্যস্থান পূরণ করে।

মাথায় বিভিন্ন চুল বিভিন্ন দশায় থাকে। তাই এক সঙ্গে মাথার পুরোটা কখনো ফাঁকা হয়ে যায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যানাজেন দশার সময় কমে এবং দু’টি চক্রের মধ্যবর্তী সময় বাড়ে। তাই এক জন প্রৌঢ় কখনো কিশোর বয়সের মতো চুলের ঘনত্ব আশা করতে পারেন না।

কোনো শারীরিক ব্যাধি যদি নাও থাকে তবু চুলের ঘনত্ব এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। তবে যেকোনো বয়সেই ৯০ শতাংশ অ্যানাজেন ও ১০ শতাংশ টেলোজেন চুল থাকার কথা। ঋতু বিশেষে আবার এই ভাগও বদলে যায়।

চিকিৎসক অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করেন। বাড়িতে যন্ত্র ছাড়াও চুলের সমস্যা জানা যেতে পারে। ৩ থেকে ৮ বার পর্যন্ত যদি মাথার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫০-১০০টি চুল গোছা হিসেবে ধরে টানার পর যদি ৩-৫ টির বেশি চুল উঠে না আসে তা হলে জানতে হবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। অস্বাভাবিক চুল পড়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যালোপেসিয়া বলে।

অ্যালোপেসিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ সময়ে যে টাক পড়া নিয়ে চর্চা শোনা যায় তা আসলে অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা পুরুষসুলভ টাক পড়া। একটা বিশেষ আকৃতিতে মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। প্রথমে চুল উঠে কপালের দু’ধার প্রশস্ত হয়ে যায়। তার পরে মাথার উপরের দিকের চুল উঠতে থাকে।

অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের দ্বারা চুল ওঠা প্রভাবিত হয়ে থাকে। জন্ম থেকেই কোন কোন চুল এই হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হবে আর কোন চুল হবে না তা নির্দিষ্ট থাকে। এটা কিছুটা বংশগত। কাজেই কোনো বিশেষ তেল চুলে মাখার পর সব চুল উঠে গেল বলে অনেক সময় যা শোনা যায় তার ভিত্তি নেই।

বয়ঃসন্ধির পর যখন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কোনও কোনও পুরুষের ওই সব অঞ্চলের চুলের গোড়া ক্রমশ ছোট ও সংকুচিত হতে হতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সেই লোমকূপগুলির আর কেশদণ্ড তৈরির ক্ষমতা থাকে না।

অ্যান্ড্রোজেন প্রভাবিত অ্যালোপেসিয়ায় চিকিৎসায় সাময়িক ফল মেলে। যত দিন ওষুধ চলে তত দিনই কেবল ওষুধের প্রভাবে গজানো চুল মাথায় থাকে। ওষুধ বন্ধ হলে চুল ঝরে যায়।

মাথার উপরিভাগে কপালের দু’পাশে, মাথার পিছনের দিকের চুলের গোড়ায় অ্যান্ড্রোজেন সংবেদক (রিসেপটর) থাকে। বয়ঃসন্ধির পর যখন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কোনো কোনো পুরুষের ওই সব অঞ্চলের চুলের গোড়া ক্রমশ ছোট ও সংকুচিত হতে হতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সেই লোমকূপগুলির আর কেশদণ্ড তৈরির ক্ষমতা থাকে না।

টাক পড়ার আরো কিছু কারণ:
. কিছু কিছু স্থানীয় অসুখ অর্থাৎ একান্তই চুলের সমস্যা, যেমন অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা বা অ্যালোপেসিয়া টোটালিস।

. কারো কারো ক্ষেত্রে টাক পড়া বড় সড় রোগের লক্ষণ মাত্র। যেমন, থাইরয়েড রোগে চুল উঠতে উঠতে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়।

. যেকোনো বড় রোগে যেমন জন্ডিস, ডেঙ্গি, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগে আক্রান্তরা পুষ্টির সমস্যায় ভোগেন। ফলে চুল পর্যন্ত পুষ্টি না পৌঁছনোয় চুল পড়ে যায়।

. টাক পড়ে সিস্টেমেটিক লুপাস এরিথেমেটোসাস নামে এক মারাত্মক রোগেও।

. কিছু ক্ষেত্রে স্থানিক টাক পড়া হলো মানসিক রোগের প্রকাশ। যেমন, চুল ছেঁড়ার বাতিক বা ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া।

. পেটের রোগেও অনেক সময়ে টাক পড়ে থাকে। আবার অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের বা স্তন্যদায়িনী মায়েদেরও চুল উঠতে থাকে। কারণ তখন পুষ্টির ঘাটতি থাকে শরীরে।

চিকিৎসা :
অতিরিক্ত পরিমাণে চুল উঠলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভাল। তা হলে চুল ওঠার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। উপযুক্ত চিকিৎসাও হয়। ভবিষ্যতে মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়া থেকে নিষ্কৃতি মেলে।
হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর কথা ভাবা যেতে পারে। মাথার একদম পিছনের দিকের ত্বকের চুল অ্যান্ড্রোজেন দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই ওই অঞ্চলের চুলের গোড়াশুদ্ধ ত্বক তুলে এনে টাক পড়া জায়গায় প্রতিস্থাপন করা যায় তা হলে নতুন জায়গায় ওই চুল বাড়তে থাকে, ঝরে পড়ে না।

দু’রকমের চুল প্রতিস্থাপন পদ্ধতি রয়েছে। ছোট ও অণু। ছোট প্রতিরোপণে ১.৫-২.৫ মিলিমিটার আকারের লোমকূপসহ ত্বক দাতা অঞ্চল থেকে তুলে গ্রাহক অঞ্চলে প্রতিরোপণ করা হয়। অণু প্রতিরোপণ বা মাইক্রোগ্রাফটিংয়ে সুবিধা বেশি। কারণ, যেখানে রোপণ করা হবে সেই অঞ্চলে বেশি কাটাকাটি করতে হয় না। ছোট ছিদ্র দ্বারাই রোপণ করা হয়।

দু’জন চিকিৎসক মিলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অণু প্রতিরোপণ করে থাকেন। একজন তোলেন। অন্যজন সঙ্গে সঙ্গে রোপণ করেন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছেই অণু প্রতিরোপণ করতে হবে।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: