কুমিল্লা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩১ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। বড় দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন প্রার্থীরা। 

রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঝুলছে প্রার্থীদের ছবিসংবলিত পোস্টার-ব্যানার। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সমাবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে নীরব থেকে কৌশলে মাঠ গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ১৯ জন ও বিএনপির ২ জন মনোনয়ন ক্রয় করেছে। 

কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন ও তার ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার পুত্র দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন ছাড়াও আ’লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিষ্টিটিউটের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল আওয়াল সরকার, সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান জয়, উপ প্রচার সম্পাদক ব্যারিস্টার নাইম হাসান, যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কবি শাজাহান আলী ভূইয়া, মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক বশিরুল আলম মিয়াজী, মহিলা সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পারুল আক্তার, কুমিল্লা জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মনির হোসেন সরকার, সদস্য (মেঘনা) নাসির উদ্দিন শিশির, মেঘনা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, একই উপজেলার ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহম্মেদ সেলিম, ফারাহ দিপা, মেহেদি হাসান সুমন, সেলিনা ইসলাম, মহিউদ্দিন শিকদার ও ড. মাহমুদ এ কাদের মনোয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় আসনটি মূলত বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এ আসনে জয়ের মুখ দেখেনি। নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালসহ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির একক শক্তিশালী প্রার্থী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি দখলে নেয়। এমপি হন আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। 

খন্দকার মোশাররফকে হারিয়ে ৩৫ বছর পর আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে সুবিদ আলী ভূঁইয়া দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের সম্ভাব্য হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গত নয় বছরে আমার নির্বাচনী এলাকা দাউদকান্দি ও মেঘনায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, যা অতীতে কোন সরকারের আমলে হয়নি। রাজনীতিতে আমার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আমি শতভাগ আশাবাদী আবার নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো।

এছাড়াও দাউদকান্দি মেঘনা আ’লীগের একটি অংশকে নিয়ে মাঠে চষে বেড়াচ্ছে বৃহত্তর দাউদকান্দির ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, আপামর জনসাধারণের নেতা একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী, কেন্দ্রীয় বঙ্গমাতা পরিষদের উপদেষ্টা দানবীর হাসান জামিল সাত্তার এর সুযোগ্য সন্তান কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সদস্য ব্যারিস্টার নাইম হাসান। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। 

বর্তমানে তিনি  এ দু’টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এ্ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও ৯৬ তে বাবা যোগদানের পর থেকে বৃহত্তর দাউদকান্দিতে আ’লীগের বিভিন্ন অংগ সংগঠন শক্তিশালী রূপ নেয়। বাবার হাত ধরেই আমার রাজনীতিতে পদার্পণ। বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সে লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বার্তা এলাকার সাধারণ জনগণের  কাছে পৌছে দেয়াসহ আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার জন্য  কাজ করে যাচ্ছি।

আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন দলের আরেক প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এবং  উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. শফিকুল আলম। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।  

স্থানীয়রা জানান, মেঘনা উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তার হাত ধরেই সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এবং তার নেতৃত্বে মেঘনা আ’লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। মো. শফিকুল আলম ভোরের কাগজ প্রতিনিধিকে জানান, আমি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী, দলমত নির্বিশেষে মেঘনাবাসী আমাকে চায়। শুধু দাউদকান্দি আ’লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পেলেই আমার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত হবে ইনশাল্লাহ। আমার উপজেলা থেকে এখন পর্যন্ত বড়  রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন  পায়নি। আমরা অনেকদিক থেকে বঞ্চিত ।

এছাড়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আবদুল মান্নান জয়  এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে থাকবেন এবং মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রের সাথে লবিং করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে নিজেকে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে স্যোসাল মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে ঝড় তুলেছেন কবি শাহজাহান আলী ভূইয়া। দাউদকান্দি উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক এই প্রার্থী ইতিমধ্যে এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। এর আগে তিনি দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। 

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন আমি আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী। দলের মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবো, না পেলে নৌকার কর্মী হয়ে কাজ করবো।

অপরদিকে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকলেও মাঠ পর্যায়ে ভালো অবস্থানে দলের প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তাঁর নাম বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে থাকলেও মাঠপর্যায়ে তাঁরই সুযোগ্য সন্তান বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য  খন্দকার মারুফ হোসেনের নামও আলোচনায় রয়েছে। কৌশলে মাঠ গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। প্রতি সপ্তাহেই বাবা অথবা ছেলে  এলাকায় আসছেন এবং দলীয় সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারে জোরালো অবস্থান নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন কর্মীদের। নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি গঠনসহ কৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,  অবাধ সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জনগণকে উপহার দিতে হলে সংসদ ভেঙ্গে লেবেল প্লেইন ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তাহলেই নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। সেই ভোট গণনা করে যে ফলাফল আসবে তার প্রতিফলন মোতাবেক ঘোষণা দিতে হবে। এ ধরণের নির্বাচন জাতীর প্রত্যাশা এবং বিএনপিও অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। 

তিনি আরো বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যত শক্তিশালীই হোক না কেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর জয়ে কোনো অসুবিধা হবে না।
 
বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: