ড. কামাল আউট, তারেক ইন

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৩৭ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে উৎসমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গোটা দেশ জুড়েই সেই আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অংশ নেয়ায় এ আমেজ আরও বেশি লক্ষ্য করা চাচ্ছে।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ চলছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত রবিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে আর এ সাক্ষাৎকার চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। 

লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

যে কারণে এখন সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ‘নির্বাচনী জোট’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব ছিনতাই হয়ে গেল? গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনকে সরিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা হিসেবে কি আবির্ভূত হলেন তারেক রহমান?

একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে, লন্ডন থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার জিয়ার বড় ছেলে দলটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন, ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কারা কারা নির্বাচন করবে, তা চূড়ান্ত করবেন তিনিই।

কিন্তু, এই তো কয়েকদিন আগে মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সবাই একমত হয়েছিল, শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেয়ার ঘোষণার পরপরই পাল্টে যেত থাকে সেই দৃশ্যপট। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগের দিন রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দম্পতির বড় ছেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

এ সময় বৈঠকে উপস্থিত গণফোরাম ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের কোনো শরিকই এর প্রতিবাদ করেননি। যার ফলে সেদিনই নিশ্চিত হয়ে যায়, যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিজয় লাভ করে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী যেই হোক না কেন আসল নেতা হবেন লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমান।

ওইদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০ দলের শরিক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চাহিদার তালিকা তার কাছে দেয়ার জন্য বলেন। এই তালিকা থেকে তারেক রহমানই ঠিক করবেন ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী, গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরু থেকেই বরাবরই সাংবাদিকদের সামনে বলে আসছেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে।

ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘দলীয়ভাবে বিএনপি আমাদের জোটে আছে। এটা শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি জোট। এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তারেক রহমানের মন্তব্য, ‘আমার টাকায় কিনা গোলাম কামাল হোসেন সাহেব। এখন থেকে আমি যে ভাবে বলি সে ভাবেই কাজ করবেন তিনি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে ওই সরকারের প্রথম কাজ হবে তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো। এবং তার মামলা প্রত্যাহারসহ তাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। এই কাজ সম্পন্ন হলেই ঐক্যফ্রন্টকে ‘গলা ধাক্কা’ দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করছেন বিএনপির ওইসব নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সহ বিভিন্ন দেশের মূল আপত্তির জায়গা ছিল তারেক রহমান। তার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে নির্বাচন করলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবনের দুর্নীতি সবার সামনে আসবে। তারেক রহমান এবং তার বন্ধুদের অপকর্মের চর্চা হবে। এই প্রেক্ষাপটেই বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সামনে আনা হয়েছে।

মূলত সবাইকে দেখানো হচ্ছে, তারেক রহমান এবং জিয়া পরিবারের অধ্যায় শেষ। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন বিএনপি আত্মপ্রকাশ করেছে। যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। কিন্তু, হঠাৎ করেই দলের কর্তৃত্ব ফের জিয়া পরিবারের হাতেই চলে এসেছে। এখন নাকি তার নির্দেশেই চলবে নির্বাচনী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’।

এমন পরিস্থিতিতে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বাইরে নীরব থাকলেও ভেতরে কিন্তু তিনিও লজ্জায় পড়েছেন। কেননা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনই যে তাকে আংকেল থেকে কামাল সাহেব ডাকতে শুরু করেছেন।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: