তৃণমূলে যে ৫ বার্তা দিল বিএনপি

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৪৯ এএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণের ঘোষণার পরই দেশে সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। নড়েচড়ে বসেছে বিএনপির তৃণমূল নেতকর্মীরাও। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের মামলা হামলার ভয়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও খোলস ছেড়ে বেড়িযে আসতে শুরু করেছে তারা। যার প্রমান মিলেছে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময়।

মাঠ দখলে তাই মরিয়া দলটির তৃণমূল নেতকর্মীরা। সম্প্রতি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় ঠুনকো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নেতকর্মীরা। কয়েক ঘণ্টা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পরেও মাঠের দখল ছাড়েনি তারা। দিন-রাত সবসময় সরব থাকছে তারা। মানছে না কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আসায় অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও।

এদিকে, মনোনয়ন বিক্রি শেষে এখন চলছে সাক্ষাৎকার। আর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিদেশে অবস্থান করা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। যে করণেই নির্বাচনকে ঘিরে উজ্জীবিত বিএনপি।

মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কারা হচ্ছেন ধানের শীষের কাণ্ডারি। তবে সেটা নিশ্চিত না হলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অন্তত ৫টি বার্তা দিচ্ছে বিএনপির হাই-কমান্ড। দলটির পক্ষ থেকে জোরালো বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা এবং বিদ্রোহী হলে কঠোর ব্যবস্থা।

জানা গেছে, সাক্ষাৎকার দিতে আসা নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত অঙ্গিকারও নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাক্ষাৎকার দিতে আসা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রথমত, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, এবার সরকারি দলকে ফাঁকা মাঠে খেলতে দেয়া যাবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়ন বোর্ডে যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে এ দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে গেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন হিসেবে। হাই-কমান্ড থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া যাবে না। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের মাঠে থাকতে হবে।’

দ্বিতীয়ত, সাক্ষাৎকারে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা স্পষ্ট বলছেন, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাই ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সারা দেশে এখন যে আলোড়ন ফেলেছে। তাতে জনমত ধানের শীষের পক্ষে। ফলে ভোটের দিন পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না। যে কোন মূল্যে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ভোটের দিন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যও প্রস্তুতি রাখতে হবে সবাইকে।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘একতরফা নির্বাচন এদেশে আর নয়। আমাদের ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।’

তিনি এবার খুলনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তৃতীয়ত, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখেছে বিএনপি। সাক্ষাৎকারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না দলটি। তবে নির্দেশনা দিচ্ছেন যাকেই দল মনোনীত করবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। এতে হোক তিনি বিএনপি কিংবা জোটের প্রার্থী, সবাই তাকে জয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে।

দিনাজপুর-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশীদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান কথা বলেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা প্রশ্ন করে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছেন। কেন আপনাকে মনোনয়ন দেয়া হবে? মনোনয়ন পেলে কি করবেন? না দিলে অবস্থান কি হবে? জয়ী হতে পারবেন কি না? দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষে কাজ করবেন কি না ইত্যাদি।’

উত্তরে তিনি বলেন, ‘সাধ্যমতো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বলেছি, আমি এখন রানিং উপজেলা চেয়ারম্যান। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি নির্বাচিত হয়েছি, এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে আছেন। দল বিবেচনা করলে অবশ্যই নির্বাচিত হব বলে আশা রাখি। তবে মনোনয়ন না দিলেও দুঃখ নেই। দল যাকে দেবে, তার হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’

চতুর্থত, জানা গেছে, মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারে প্রার্থিতা নিয়ে বিদ্রোহের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে বিএনপি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার হয়ে অন্যদের কাজ করতে হবে। যদি বিদ্রোহী করে তাহলে সারা জীবনের জন্য বহিষ্কারও হতে হবে।

পঞ্চগড়-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘এই আসনে আমরা চারজন মনোনয়ন ফরম তুলেছি। দলের বাইরে কাউকে প্রার্থী না দিতে অনুরোধ করেছি। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে মেনে নেব।’

পঞ্চমত, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন প্রত্যাশীদের দলীয় প্যাডে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলম স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন দেয়া হচ্ছে। যাতে করে নির্বাচন কমিশন থেকে তারা মনোয়ন ফরম তুলতে ও জমা দিতে পারেন। পাশাপাশি সবার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গিকার নেয়া হচ্ছে যে, দল বলা মাত্র মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে।

সব বিভাগের সাক্ষাৎকার শেষ হলে আগামী ৮ ডিসেম্বর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

উল্লেখ্য, তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে গত ১২ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয় বিএনপি। পাঁচ দিনে দলটির ৪ হাজারের বেশি নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: