জাপাকে যে কয়টি আসন দেবে আ’লীগ

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৫ এএম

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল যে প্রত্যাশা নিয়ে মহাজেটে যোগ দিচ্ছে, সেখানে আওয়ামী লীগ সুবিচার করবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহাজোটের শরিক দলগুলো যেন জয়ী হতে পারে, এমন প্রার্থীর বিষয়ে প্রস্তাব দেন। আমরা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভেবেছি। নেত্রী যদি আমাদের প্রতি সদয় হন, তা হলে আমরা তাকে সুন্দর একটা ফল উপহার দিতে পারব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টি চায় ৭০ আসন। ইতিমধ্যে তাদের ৪০ বা ততোধিক আসনে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দর কষাকষিতে কোনো পক্ষেই সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে অবিশ্বাস উভয় দলে। এজন্য খুব কৌশলে এগুচ্ছে তারা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি।

রহুল আমিন বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অতীত ইতিহাস, দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতা, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় দলের ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই জনগণ আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবে।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাপা কতটা আত্মবিশ্বাসী এমন প্রশ্নের জবাবে রহুল আমীন হাওলাদার এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, গত শনিবার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় আসন ভাগাভাগির তাগাদা দিয়ে চিঠি দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে। সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও দেয়া হয়। জবাবে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন বণ্টনের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। তালিকায় ৪০টির বেশি আসন মহাজোট থেকে জাপার জন্য ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি আওয়ামী লীগ ও জাপার শীর্ষ নেতাদের কেউ। তাদের ভাষ্য, জোটনেত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু ঠিক করছেন। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দু্ই-একদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জোটের প্রার্থীতালিকাও চূড়ান্ত করছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। গত কয়েকদিন মনোনয়ন বোর্ডের ধারাবাহিক বৈঠক চলার মধ্যেই এসব সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের আসন বণ্টনের বিষয়টি দুই-একদিন পর তাদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে ৭০টি আসন চেয়ে চিঠি দিয়েছে। বাকিটা নেত্রীর সিদ্ধান্ত।

এর আগে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশে এখন মাত্র দুটি দল। একটি আওয়ামী লীগ আর অপরটি জাতীয় পার্টি। এ সময় দলের সাংগঠনিক রূপ ধরে রাখার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির নেতারা বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। সবাই যেন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলের পক্ষে কাজ করেন।

বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, ‘আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন আমাদের। আমাদের তো বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। এখন দুটি দল মাত্র, আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নাই। অনেক দুঃসময় পেরিয়ে জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। পার্টি সাংগঠনিক রূপ নিয়েছে, যা ধরে রাখতে হবে।’

প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে এরশাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁর দুঃখকষ্টের কথা স্মরণ করে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা গ্রহণ করবেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁর ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ছেড়ে দিতে বলেন।

এরশাদ বলেন, ‘আমার ওপর ছেড়ে দাও। রাজনৈতিক কারণে অন্য জোটে যেতে হলে এর সিদ্ধান্ত আমি নেব। দেশ, পার্টি ও নেতা-কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ভোট ও জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেব। এর আগে প্রেসিডিয়াম সভায় আমাকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ আরও বলেন, আজ এত লোক তাঁর সঙ্গে। জাতীয় পার্টির দুঃখ ঘুচেছে। জাতীয় পার্টি বিলীন হয়নি, তার প্রমাণ দলের নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবাইকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারবেন না। যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই মনোনয়ন দেবেন। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যায়নি। এ জন্য ৩০০ আসনে প্রার্থী আছে কি না, তা দেখতে চেয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা দেখে বুঝতে পেরেছেন তাঁরা সফল হয়েছেন।

১১ নভেম্বর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। চলে পাঁচ দিন। মনোনয়নপ্রত্যাশী ২ হাজার ৮৬৫ জনের ফরম যাচাই-বাছাই করে ৭৮০ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।

এরশাদ বলেন, ‘এই পার্টির জন্য আমার চেয়ে কেউ এত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে নাই। একটা দিনের জন্যও মুক্ত ছিলাম না আমি। এখনো নই। একটা দিনের জন্যও শান্তিতে ছিলাম না। এখনো মামলা চলছে আমার। মামলার নিষ্পত্তি হয় নাই। এই মামলার ভার মাথায় নিয়ে আমি তোমাদের নেতৃত্ব দিয়েছি।’

এদিকে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণে যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন, তা পার্টির সবাই মেনে নেবেন। দলের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্তে পার্টির কেউ এরশাদকে ছেড়ে যাবেন না। কারণ এরশাদকে সবাই বিশ্বাস করেন। বৃহত্তর স্বার্থে মহাজোট কিংবা অন্য কোনো জোটে এরশাদ যাবেন কি না, সেটা একান্ত তাঁর (এরশাদ) সিদ্ধান্ত। মহাসচিবের মতে, এরশাদ নির্ভুল পথে হাঁটছেন।

মহাজোটের হয়ে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীরা

জাপার হয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, নীলফামারী-৪ শওকত চৌধুরী, রংপুর-১ মসিউর রহমান রাঙ্গা, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, লালমনিরহাট-৩ জিএম কাদের, গাইবান্ধা-১ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্, বগুড়া-৩ নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ নূরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ মুহম্মাদ আলতাফ আলী, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতনা, জামালপুর-৪ মামুনুর রশিদ, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, মংমনসিংহ-৫ সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-১ মুজিবুল হক, ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন, ঢাকা-৫ আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়নগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ একেএম সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, সিলেট-২ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ-১ আবদুল মুনিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, কুমিল্লা-২ আমির হোসেন, কুমিল্লা-৮ নূরুল ইসলাম মিলন, লক্ষ্মীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়া উদ্দিন বাবলু, কক্সবাজার-৩ সন্তোষ শর্মা, ফেনী-৩ লে. জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী এবং টাঙ্গাইল-৫ আসনে পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনির।

এ ছাড়াও রংপুর বিভাগের আরও কয়েকটি আসন জাতীয় পার্টির জন্য ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ।পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের জন্য রংপুরের যেকোনো একটি আসন ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এরশাদের প্রত্যাশা রংপুরের ওই আসনসহ ঢাকা-১৭ আসন। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তালিকায় ঢাকা-১৭ আসনে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতার নাম চূড়ান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: