পুলিশের ৭০ কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি ঐক্যফ্রন্টের

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৩৬ পিএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৭০ কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে নির্বাচনে তাদের সব ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখারও দাবি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন(ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে তালিকা জমা দিয়েছে রাজনৈতিক এই জোট। জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ সংক্রান্ত চিঠি ও তালিকা জমা দেন।

জমা দেয়া তালিকায় কে কে আছেন? -সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলাল বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য পুলিশের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারি কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া জন্য বলেছি। পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারের মতো পদধারী ৭০ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। যারা সমতল মাঠকে অসমতল করার কাজে ব্যস্ত, তাদের নাম, পদবী, কর্মস্থলসহ সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দিয়েছি।

তিনি বলেন, সিইসি আজ নিরপেক্ষ থাকার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানানো মানে অনুরোধ করা। তিনি তো নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সরকারের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইসির কাছে দালিলিক কাগজপত্র উপস্থাপন করেছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা যে কাজগুলো করতে পারে না, সে কাজগুলো অনবরত করা হচ্ছে। তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেছি এবং প্রতিকার চেয়েছি।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আরো বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এসব কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আমাদের চোখে পড়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হলো- রাষ্ট্রপতি, আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি; তার পুত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। বঙ্গভবনে এলাকার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের রাষ্ট্রীয় খরচে আদর-আপ্যায়ন করা হয়েছে, যেটা প্রভাব বিস্তারের একটা অন্যতম উদাহরণ হিসেবে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নভেম্বর বৈঠক করেছেন। পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিট্রন পুলিশের কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনা নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।

আলাল বলেন, এনটিএমসি এবং বিটিআরসি বিতর্কিত দলকানা কর্মকর্তা কর্মচারীরা আছেন। তারা কিছুদিন আগে থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারেক রহমানের স্কাইপে কথপোকথন বন্ধ করেছেন। গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশেপাশে ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ কেরেছেন। যেটাও আচরণবিধির লঙ্ঘন।

ব্যাপকহারে গ্রেফতার এখনো চলছে। গতকাল রাতেও বিভিন্ন জায়ড়গায় গ্রেফতার চলেছে। তারমধ্যে আমাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও রয়েছে। যে নির্দেশনা পোস্টার বিলবোর্ডসহ প্রচারণা সামগ্রী সরানোর যে নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছিল, এখনো ঢাকা শহরের বহু জায়গায় নৌকা এবং লাঙ্গলের পোস্টার রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

উপরন্তু সিটি করপোরেশন ও আরো কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মের নামে নৌকার পক্ষে প্রচার কাজ অবিরাম চালানো হচ্ছে। এটা বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে বলে জানান মোয়াজ্জে হোসেন আলাল।

তিনি বলেন, গণহারে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে।

সবশেষে আলাল বলেন, আমরা ঢালাও অভিযোগ করি না। আজকে লিখিতভাবে সব তথ্য প্রমাণসহ দিয়ে গেলাম।

চিঠিতে যে ৭০ কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে, তারা হলেন:- র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ইকবাল বাহার, নৌ-পুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, কেএমপি’র কমিশনার হুমায়ুন কবির, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, সিএমপি’র কমিশনার মাহবুবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম, ঢাকা সিটি এসবির ডিআইজি মো. আলী মিয়া, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাশ ভট্টাচার্য, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, হেডকোয়ার্টারের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, খ. মহিদ উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন, আরএমপি’র ডিআইজি হাফিজুর রহমান, ডিএমপির ডিআইজি আব্দুল বাতেন, র‌্যাব-৪ অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, খুলনা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি একেএম মাহিদুল ইসলাম, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান, সিলেট রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান, ডিবির জয়েন্ট কমিশনার মাহবুব আলম, সিআইডির এসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম, টুরিস্ট পুলিশের এএসপি আলতাফ হোসেন, তেজগাঁওর ডিসি (ডিএমপি) বিপ্লব কুমার সরকার, ডিএমপি’র ডিসি হারুন-অর রশিদ, রমনার ডিসি মারুফ হোসেন সরদার, সিএমপির ডিসি এসএম মেহেদী হাসান, ডিএমপির ডিসি খন্দকার নুরুন নবী, সিএমপির ডিসি ফারুকুল হক, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, ডিএমপির ডিসি এসএম মুরাদ আলী, ডিএমপির এডিশনাল ডিসি শিবলী নোমান।

এছাড়া এসপিদের মধ্যে রয়েছেন:- ঢাকার এসপি শাহ মিজান সফি, নারায়ণগঞ্জের মো. আনিসুর রহমান, মুন্সীগঞ্জের এসপি যায়েদুল আলম, নরসিংদীর মিরাজ, টাঙ্গাইলের রঞ্জিত কুমার রায়, মাদারীপুরের সুব্রত কুমার হাওলাদার, ময়মনসিংহের শাহ আবিদ হোসেন, শেরপুরের আশরাফুল আজিম, সিলেটের মনিরুজ্জামান, বরিশালের সাইফুল ইসলাম, ভোলার মুক্তার হোসেন, খুলনার এসএম শফিউল্লাহ, সাতক্ষীরার সাজ্জাদুর রহমান, বাগেরহাটের পঙ্কজ চন্দ্র রায়, যশোরের মঈনুল হক, ঝিনাইদহের হাসানুজ্জামান, কুষ্টিয়ার আরাফাত তানভির, চট্টগ্রামের নূরে আলম মিনা, নোয়াখালীর ইলিয়াস শরিফ, ফেনীর এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রংপুরের মিজানুর রহমান, দিনাজপুরের সৈয়দ আবু সায়েম, ঠাকুরগাঁওয়ের মনিরুজ্জামান, রাজশাহীর শহীদুল্লাহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোজাহেদুল ইসলাম, নওগাঁর ইকবাল হোসেন, নাটোরের সাইফুল্লাহ, বগুড়ার আশরাফ আলী, সিরাজগঞ্জের টুটুল চক্রবর্তী এবং পাবনার এসপি রফিক ইসলাম।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: