টমেটোর কেজি ১০ টাকা, কৃষকের মাথায় হাত 

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৪১ পিএম

টমেটোর দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় এবং কম ফলনের ফলে বেদনায় রূপ নিয়েছে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীর প্রায় ৬ হাজার চাষির। বর্তমানে চাষিরা প্রতি কেজি টমেটো ক্ষেত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। এবং ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে কৃষকদের কাছে নিচ্ছে পাইকাররা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২ হাজার ৬৫০ একর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে টমেটোর ফলন ভাল হয়নি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করলেও ফলন কম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হতে পারে।

উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কিছু কিছু মাঠে এখন ধানের চারা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষণাগার না থাকায় ক্ষেত থেকেই চাষিরা টমেটো কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলন কম হলেও দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে টমেটো চাষ করে লসে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।
উপজেলার প্রতিটি টমেটো চাষি আজ ক্ষতির মধ্যে কারও লাভ হবে নজির নাই। প্রতি বছর এক বিঘায় মৌসুম ২ মাসে ৯০-১০০ মণ টমেটো জমি থেকে উৎপাদন হয়। এ বছর ১ বিঘায় ৫০-৬০ মণ উৎপাদন হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হয় কৃষকদের। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রতি বিঘায় টমেটো বিক্রি করেছে ১০ হাজার টাকার।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস ধরে জমি থেকে টমেটোর তোলা শুরু হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা করে পাওয়ায় খুশি ছিল চাষিরা। কিন্তু পরের সপ্তাহে ১৫ টাকা, এরপর ১০ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে টমেটোর দাম দশ টাকা ও উন্নতমানের টমেটো সর্বোচ্চ এগার টাকায় নেমে গেছে। চাষিরা নামমাত্র মূল্যে টমেটো বিক্রি করছেন। এতে টমেটো বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

সুলতাগজঞ্জ এলাকার কৃষক লোকমান আলী বলেন, সোমবার থেকে জমিতেই প্রতি মণ চারশত টাকা দরে টমেটো বিক্রি করছি। এবং ৪৫ কেজিতে মণ দিতে হচ্ছে। এদিকে ফলন কম গাছের স্থায়ীত্ব কম দামেও কম কি করে সার ও বীজের টাকা পরিশোধ করবো বুঝতে পারছি না। কোন বছর এ রকম হয় না।

একই উপজেলার মহিশাল বাড়ি গ্রামের আবু সুফিয়ান জানান, টমেটো চাষ করে অন্য বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু এবার হচ্ছে না এমনকি ভালো দাম পাচ্ছি না। কিস্তিতে টাকা তুলে অন্যের দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ করেছি। টমেটোর গাছ ভালো হয়েছিল। কিন্তু গাছ বেশি দিন টিকলো না এবং টমেটোর দাম খুবই কম। মনে হচ্ছে টমেটো বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। বড় চিন্তায় আছি।

গোদাগাড়ী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবু বক্কার বলেন, প্রায় গত কয়েকদিন আগে পাইকারদের থেকে ২৫-৩০ টাকা করে টমেটো কিনতে হতো। আর খরচ বাদ দিয়ে খুচরা বিক্রি করতাম ৩০-৩৫ টাকায়। আর এখন ১০-১২ টাকায় কিনে বিক্রি করছি ১৩ থেকে ১৬ টাকায়। আগের চেয়ে টমেটোর দাম অনেক কমে গেছে।

ঢাকা যাত্রাবাড়ী বাজারের টমেটো পাইকার জুয়েল হোসেন বলেন, বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় প্রতি মণ টমেটো কিনতে হচ্ছে। প্রতি মণে যাতায়াত খরচ রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক মণ টমেটো কিনে খরচসহ পড়ছে প্রায় ৪৪০ টাকা। আর খুচরা বিক্রি করছি ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকা দরে। এবং বাইরের দেশ থেকে টমেটো আমদানি হওয়ায় দেশে উৎপাদিত টমেটো বেশি হয়ে যাচ্ছে। ফলে দাম কমে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে অগ্রীম টমেটো আবাদ ও শীত কম হওয়ায় প্রতিকূল পরিবেশ পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর টমেটোর ফলন কম হয়েছে। এবং কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে না। কৃষকরা আমাদের পরামর্শ ছাড়া বীজ ক্রয়, সময়ের আগে বোপন ও তথ্য গোপন করার জন্য গাছ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে ফলন কমে গেছে। এটি শীত মৌসুমের সবজি কিন্তু এবার শীত কম হওয়ায় এমন হয়েছে। এই শবজি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বীজ বোপন ও ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে উত্তোলন করলে ফলন ভাল হয়। এছাড়াও আমাদের পরামর্শ হল, যদি স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষনাগার করা যায়, অথবা চাষিদের সংরক্ষণ প্রযুক্তিটা বুঝাতে পারা যায় বা সংরক্ষণ করে কিছুদিন পরে বিক্রি করতে পারলে চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: