টাঙ্গাইলে নতুন চার প্রার্থীর সময় ১৯ দিন

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২৪ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলে বিগত বছরগুলোতে যারা নিজ সংসদীয় আসনে যাতায়াত করেননি, নিজ দল বা জোট সংগঠিত করেননি, দল-জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরী করেননি এবং যারা নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের জন্য এবারের ভোট বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, যারা দলের রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত ছিলেন না, কিন্তু কোনো কারণে অনেকটা হঠাৎ দল-জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এবার দুষ্কর হতে পারে। কারণ, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হবে আগামী (১০ ডিসেম্বর)। সেইদিন থেকে (৩০ ডিসেম্বর) ভোট গ্রহণের আগে (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত তারা নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পাবেন। কার্যত এই ১৯ দিনের মধ্যেই নতুন প্রার্থীদের এলাকা গোছাতে হবে। এই স্বল্প সময়ে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী, ভোটার ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং দল-জোট গুছিয়ে ভোটের ফল নিজ ঘরে নেয়া কতটা সম্ভব- এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার রাজনৈতিক দল-জোটগুলোতে।

টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এবার টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর), টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আতাউর রহমান খান এবং টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। এদেরকে নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে তানভীর হাসান ছোট মনির এবং খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরা জাতীয় নির্বাচনের মাঠে নতুন মুখ। এখন এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এদিকে জনপ্রিয় প্রার্থী ছোট মনিরকে মনোনয়ন দেয়ার পাশাপাশি মশিউজ্জামান রোমেলকে মনোনয়নের চিঠি দেয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গোপালপুর-ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুসারীরা। তারা মশিউজ্জামানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে মশিউজ্জামান রোমেলকে ভূঞাপুর-গোপালপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক। 

ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক বলেন, বর্তমান এমপি ও তার পরিবার এলাকার কারও সঙ্গে সম্পর্ক নেই। দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের কিছুতেই মেনে নিবে না। রোমেলের এলাকায় জনভিত্তি নেই। নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও নেই কোনো যোগাযোগ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী আব্দুল সালাম পিন্টুর ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর এই আসনে আওয়ামী লীগকে জয়লাভের জন্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বিকল্প নেই বলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা জানান। ছোট মনির পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ ভোটাররাও একত্রিত হয়েছে জয়লাভ করানো জন্য।

এছাড়া বিএনপি আটটি আসনে বিগত ২০০৮ সালের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে। পুরনো ওই প্রার্থী ছাড়াও প্রতিটি আসনে একাধিক নতুন প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে ফকির মাহবুব আনাম স্বপন এবং টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে নূর মোহাম্মদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এছাড়া আটটি আসনে ৯জন নতুন প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করেই টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনীর। অপরদিকে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তার মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন।


এদিকে টাঙ্গাইলের আটটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিতো প্রতিটি আসনেই দুই জন, কোনো আসনে তিনজনকেও দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র-প্রাপ্তরা পড়েছেন দ্বিধাধন্দে। কে মূল প্রার্থী, কে বিকল্প প্রার্থী বোঝা দায়। তাছাড়া স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা পড়েছেন দোটানায়। তারা কোন প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন এ নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, যেহেতু প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পত্রেও স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে। সেজন্য যারা চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক পাবেন না, তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এ নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি কেটে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: