কুমিল্লা হানাদার মুক্ত দিবসে পতাকা উত্তোলন ও র‌্যালি

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:০০ এএম

১৯৭১ এর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লা। এর পর থেকে প্রতি বছর ৮ ডিসেম্বর যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দিবসটি উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

কুমিল্লা মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বও সকাল ৮টায় কুমিল্লা টাউনহল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় দিবসটি। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধ কালীন পতাকা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আহবায়ক সফিউল আহাম্মেদ বাবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পাপরি বসু, কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কুমিল্লা মহানগর আ.লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড শাখা, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা বন বিভাগসহ আরো অনেক। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে এমপি বাহার ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, আজকের এই দিনে হায়েনা থেকে মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লা। এখন থেকে আর কোনো হায়েনার জায়গা কুমিল্লার মাটিতে হবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন- আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেশকে কলঙ্ক মুক্ত রাখতে হবে। পরে টাউন হল থেকে র‌্যালি বের করা হয়। 

র‌্যালিটি পৌর পার্ক সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয় এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করে সর্বস্তরের মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে কুমিল্লঅ টাউন হলের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে। 

এই অভিযান কুমিল্লার বেশ কিছু অঞ্চল বিশেষ করে বিবির বাজার, নিশ্চিন্তপুর, চৌদ্দগ্রাম, বেলুনিয়া, ইটাল্লা ও মাছিগাছায় তীব্র হয়ে উঠে। নভেম্বরের শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমনের কাছে হার মেনে পিছু হঠতে শুরু করে। ২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদিঘী এলাকা দখল করে নেয়। এটিই প্রথম কুমিল্লার মুক্ত অঞ্চল। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ আরো জোরালো হয়। 

৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর যোদ্ধারা কুমিল্লার ময়নামতি আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এদিন রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আরডি হীরার নেতৃত্বাধীন ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের দায়িত্বে যৌথবাহিনীর ৩০১ মাউন্ট বিগ্রেড এবং মুক্তিবাহিনীর ইস্টার্ণ সেক্টর লালমাই পাহাড় ও লাকসামে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ঘাটি ভেঙে ফেলে এবং লাকসাম কুমিল্লার পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 

এসময় কুমিল্লার ও লাকসামে পাকিস্তানি বাহিনীর ১১৭ বিগ্রেড ও ৫৩ পদাতিক বিগ্রেডের দায়িত্বে ছিল। লাকসামের মুদাফফরগঞ্জ হানাদার বাহিনীর সম্মুখে যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয় এবং ৬ ডিসেম্বর মুদাফফরগঞ্জ মুক্ত হয়। পরের দিন মুক্তিবাহিনী ঢাকার সাথে ময়নামতি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এদিকে লাকসামের ঘাঁটি রক্ষায় পাকিস্তান বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠে। পাক বাহিনীর ২২ বেলচু রেজিমেন্ট কুমিল্লা বিমানবন্দও সংলগ্ন সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থান নেয়। 

৭ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ২৭জন যোদ্ধা শহীদ হন। রাতেই পাকবাহিনীর পতন ঘটে। ভোর রাতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মুক্ত কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শহর মুক্ত হলেও শহরের ৬ কি.মি. পশ্চিমে ময়নামতি সেনানিবাস তখনও দখলে। 

বিভিন্ন স্থান থেকে পাক বাহিনী পিছু হটে এবং গ্যারিসনে পরপর তিনটি ছোট ছোট ঘাটি সৃষ্টি করে ট্যাংক ও কামান বহর দিয়ে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। যৌথবাহিনী ময়নামতি গ্যারিসন অবরোধ করে অনবরত বিমান হামলা পরিচালনা করে। ঢাকার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৬ ডিসেম্বর ময়নামতি গ্যারিসনেও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। 

এখানে পাকিস্তানি ২৫জন ব্রিগ্রেডিয়ার, ৭৬জন অফিসার, ১শ ৭৫জন জেসিও এবং ৩ হাজার ৯শ ১৮জন সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। ময়নামতি গ্যারিসন ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত হলেও কুমিল্লা শহর ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ৮ ডিসেম্বর বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী, উৎসুক জনতার উপস্থিতিতে ওইদিন আনুষ্ঠানিক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী ও কুমিল্লার প্রথম জেলা প্রশাসক এডভোকেট আহমেদ আলী।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: