‘আপনি আমাকে গুলি করে দিলেন?’

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৭ পিএম

নোয়াখালী-১ (চটাখিল-সোনাইমুড়ী একাংশ) আসনের বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়া তার নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট না চেয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাত করে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

সিইসিকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার কথাও বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ একাকার হয়ে গেছে। যেটা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী বলে আমি মনে করি এবং এটা করা উচিত না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এসব করছে তাদেরকে পরিবর্তন করার জন্য আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকার কথাও বলেছি। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগ ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো মিছিল ছিল না, কিছুই ছিল না। আমার গণসংযোগের পেছনে পুলিশ ছিল, সামনেও ছিল। আমার পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আমার গণসংযোগের বিষয়ে অবহিত করা ছিল।

এক পর্যায়ে সোনাইমুড়ী থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ মানুষের ওপর এলোপাথারি গুলি করা শুরু করলো। আমি নিষেধ করে বললাম গুলি করছেন কেনো? গুলি স্টপ করেন প্লিজ। তারপরও ওসি সাহেব গুলি স্টপ করছেন না। সম্ভবত শর্টগান ছিল- স্প্রিন্টারের আঘাতে পরে যাচ্ছিল।

আমি বললাম মানুষকে গুলি কইরেন না। গুলি করলে আমাকে করেন। তখন আমাকে সে গুলি করে দিল!

আমার কণ্ঠ নালীর ওখানে গুলি লেগে রক্ত ঝরছিল। আমি বললাম আপনি আমাকে গুলি করে দিলেন?

গুলি করলেন আমাকে তারপর সে বলল- আপনি ওদিকে যান। তার দেখানো দিকে যাওয়ার সময় সেখানে পেছনে আবার গুলি করে দিল। আমার মোট সাতটা গুলি লাগছে। পেছনে ছয়টা সামনে একটা।

তিনি আরও বলেন, আমি সিইসিকে বললাম যে পুলিশ কি বলল না বলল এটা কোনো মেটার না। আমি একজন ল’ইয়ার হিসেবে, ব্যারিস্টার হিসেবে আন্ডার ওয়েট হিসেবে বলতেছি এই হলো ঘটনা। সেখানে কোনো আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পুলিশের প্রহরায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির যত দোকান-পাট, হাসপাতাল সব ভাঙচুর করছে। ভাঙচুর করার পর তারা ভিন্ন স্টোরি বানিয়েছে।

এ আইনজীবী বলেন, চাটখিল থানার ওসি সামসুদ্দিন সে বিএনপির লোক ধরে নিয়ে ঘুষ নেয়। প্রতিদিন ১৫-২০ জন ধরবে। কোনো মামলা নাই কিছু নাই। সেখান থেকে হয়তো ৫জনকে রিকোস্টে ছাড়ছেন। আর ৫  জনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আর ৫জনকে চালান করে দিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আছে- যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদেরকে গ্রেফতার করা যাবে না। তা সে মানছে না।

তিনি বলেন, আমার এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। চাটখীল ও সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কাছে যে অস্ত্র আছে। দুই-তিন থানায়ও এতো অস্ত্র নাই। অস্ত্র উদ্ধার করেন। উনারা (কমিশন) বলেছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক অবৈধ অস্ত্রধারীরা এবং পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। নিরিহ মানুষের উপর নির্যাতন করছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ভোট চাচ্ছে না। তাদের প্রার্থী কর্মীরা ভোট চাচ্ছে না। মানুষকে হয়রানি করছে, সন্ত্রাস করছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করছে, মানুষকে আহত করছে। শুধু আমার এলাকায় না এটা সারা বাংলাদেশে একই কাজ করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা কোথাও ভোট চাচ্ছে না। তারা মিছিলে হামলা করতেছে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানানোর পর সিইসি বলেছেন- আমরা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে আমরা বদ্ধ পরিকর।

তিনি বলেন, আমি প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্যও সিইসিকে বলেছি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। কমিশনের দায়িত্ব প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া, সকল ভোটাররা তাদের ইচ্ছামত ভোট দিতে পারেন ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া।

আমি সোনাইমুড়ী থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছি। চাটখীল থানার ওসির বিষয়েও তদন্ত করে তার প্রত্যাহার চেয়েছি। এগুলি ওনি শুনেছেন। উনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।

&dquote;&dquote;প্রসঙ্গত, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবকে সেখানকার অনেক নেতাকর্মীকে ছররা গুলি ছুড়ে আহত করেন ওসি আবদুল মজিদ। শনিবার বিকালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি সদরে এ ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: