নতুন মন্ত্রীরা সাবধান!

প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:৪১ পিএম

সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা অভিজ্ঞতায় নতুন হলেও রাজনীতির মাঠে কেউ নতুন নন। সকলের রাজনৈতিক অভিজ্ঞাতা বেশ সমৃদ্ধ বলে জানা গেছে। তবে বয়সের বিচারে এই মন্ত্রিসভার সদস্যদের তরুণ বলার অবকাশ নেই। কারণ সকল সদস্যের গড় বয়স ৬০ বছর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা অঙ্গীকারে রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। এর ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আর এই দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ।

গতকাল মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সদ্য নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ও উপমন্ত্রীদের সতর্ক বার্তা দেন এই বলে, আপনারা সব সময় আমার নজরদারির আওতায় রয়েছেন। কে কী করছেন, আমি জেনে যাব। সতর্ক থাকবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয়ের উপর তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিনিয়রদের সাফল্যের জন্যই বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে এবং জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই কারও কাছে যেন না শুনি, তারা ব্যর্থ ছিলেন বলেই বাদ পড়েছেন।

তিনি বলেন, এখানে অনেক উপদেষ্টা আছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা আছেন, তাদের উদ্দেশে আমি একটা কথাই বলতে চাই, আমি অনেক নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বানিয়েছি। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের দায়িত্ব এ জায়গা থেকে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। সবকিছু জেনেবুঝে তারপর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দিয়ে আমরা দেখতে চাই তারা কেমন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরাকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধ ও উন্নতির পথে নিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানান দায়িত্ব প্রাপ্ত সকল মন্ত্রিসভার সদস্যগণ।

প্রথম কর্মদিবেসে এমন কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আস্থার বরখেলাপ হবে না। উনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।

বুধবার (৯ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেণ। শপথ গ্রহণের পরদিন গতকাল মন্ত্রিসভার দসস্যরা সচিবালয়ে নিজ দফতরে প্রথম অফিস করেন।

এদিকে নতুন মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করার পর থেকে গণমাধ্যমকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় কিন্তু আমাদের অনেক এমপি কারাগারে। যে জন্য আমরা বদিকে নমিনেশন দেইনি। তার ওয়াইফকে আমরা নমিনেশন দিয়েছি টেকনাফ অঞ্চলে। মন্ত্রীত্ব কারও পার্মানেন্ট না, যে কোন সময় রদবদল হতে পারে এবং যে কেউ মন্ত্রণালয়ে আসতে পারেন বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল ৪ আসনের সংসদ সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার কারণে আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান রাঙ্গার পরিবর্তে তার পিতাকে মনোনয়ন দেয়া হযেছে।

বাংলাদেশের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হলো ভূমি। এখানে পদে পদে জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবার মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি পাওয়া ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিগত মন্ত্রিসভার একমাত্র সদস্য, যিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের সম্পদের হিসাব গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন।

মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা বিগত সরকারের আমলেই ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছি, এখন এটাকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।

শিক্ষা নিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে নতুন দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম তিনি বরদাশ করবেন না বলে জানান তিনি।

এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ইশতেহার বাস্তবায়ন হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করব।

দুর্নীতি ও ফাঁকফোকর বন্ধ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আধুনিক ও মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নবনিযুক্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দুপুর সোয়া ১টায় সচিবালয়ের নিজ কক্ষে ঢোকেন। এবং পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, গুণগত কাজ ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা দেশে আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়নে চমক দেখাতে চাই। সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা কাজ করব। কোন প্রকার অন্যায় বরদাশ করা হবে না বলে এসময় কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেন এই মন্ত্রী।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল নিজ দফতরে বলেন, তিনি একটি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলে সরকারের বর্তমান মেয়াদেই দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

রেলকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নতুন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। গতাকল রেল ভবনের সভাকক্ষে পরিচিতি সভায় নতুন মন্ত্রী বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, সেই অনুযায়ী তিনি রেলকেও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেবেন।

নতুন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারি ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবেন বলে জানান। বিকেলে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার মন্ত্রণালয়ে যান।

পুনরায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর আসাদুজ্জামান খান গতকাল দপ্তরে যাওয়ার আগে নিচতলায় সাংবাদিকদের তিনি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

বিডি২৪লাইভ/এসবি,এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: