সৈয়দ আশরাফের আসন নিয়ে বিপাকে ইসি

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:১৩ এএম

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে পুনর্নির্বাচন না উপ-নির্বাচন হবে, তা নিয়ে বিশেষ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর ফলে এ ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

কারণ এর আগে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর এবং শপথ নেওয়ার আগে কারও মৃত্যুর নজির নেই। এ বিষয়ে সংবিধান, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি বা নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশেও (আরপিও) কিছু বলা নেই।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের আগে কোনো প্রার্থী মারা গেলে ওই আসনের তফসিল স্থগিত করে পুনর্নির্বাচন হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পরে কোনো আসন শূন্য হলে তা সংসদ থেকে আসন শূন্য ঘোষণা করে ইসিকে জানানো হয় এবং ইসি তখন ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে উপ-নির্বাচন হবে; না পুনর্নির্বাচন হবে- এ নিয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু নেই।

সংসদ সচিবালয় সূত্র  জানিয়েছে, শপথ নেওয়ার আগে কাউকে এমপি হিসেবে গণ্য করার সুযোগ আইনে নেই। বিদ্যমান সংসদের কোনো এমপি মারা গেলে স্পিকার সংসদের বৈঠকে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং বৈঠক ওই দিনের জন্য মুলতবি হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের ক্ষেত্রে কী ঘটবে তা স্পষ্ট নয়। অতীতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না থাকায় রেওয়াজও অনুসরণ করতে পারছে না সংসদ সচিবালয়। এ নিয়ে সংসদ সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সংসদ সচিবালয় থেকে ইসিকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর সংবাদটি জানানো হয়েছে। তবে তাতে আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অন্যদিকে সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পরে শূন্য ঘোষণার দায়িত্ব সংসদের ওপরে বর্তায় বলে কমিশন সভার সব সদস্য একমত পোষণ করেছেন। ওই বৈঠকের পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা সংসদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদ থেকে ইসিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানে আসন শূন্যের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কারণ তিনি যতক্ষণ শপথ না নেবেন ততক্ষণ এমপি নন। এমপি ছাড়া কারও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংসদের নেই। এখন ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি জানান, দশম সংসদের মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও একাদশ সংসদের নির্বাচিতরা এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আগের সংসদ শেষ হয়ে গেছে। তাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দশম সংসদের এমপি হলেও একাদশ সংসদের এমপি বলা যাচ্ছে না।

স্পিকার আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলেও সৈয়দ আশরাফ যেহেতু শপথ নেননি, তাই বিষয়টি সংসদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

তবে ইসি-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সংসদ থেকে আসনটি শূন্য ঘোষণা না হলে তারা উপ-নির্বাচন করতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে তারা সংবিধান মেনে একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত সদস্য ৯০ দিনের মধ্যে শপথ নিতে ব্যর্থ হলে আসনটি শূন্য হওয়ার বিধান রয়েছে। ওই সময়ের পরে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করবে ইসি।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। যদিও অসুস্থতার কারণে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ১ জানুয়ারি সংসদ সচিবালয় থেকে নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ২ জানুয়ারি বুধবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দেয়। ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।

ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৭ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ কারণে তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর দশম সংসদ থেকে নব্বই দিনের ছুটিও নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতিমণ্ডুলীর সদস্য ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: