বিএনপি ছাড়াই ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৯ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আগামী দিনের কর্মপন্থা ঠিক করতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন এই জোটের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা। তবে এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

বিকাল ৫টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী এই জোট গঠনের পর এবারই প্রথম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির কাউকে দেখা যায়নি। জোটের নেতাদের দাবি, অসুস্থতার কারণে বৈঠকে যোগ দেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে দলটির অন্য কোনো প্রতিনিধি কেন বৈঠকে দেখা যায়নি- এর কোনো জবাব তারা দেননি।

সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পরস্পরবিরোধী এই অবস্থান প্রকাশ্য হওয়ার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতারা।

জোটের একাধিক নেতা জানান, বুধবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বিকাল ৪টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি নেতাদের অনুরোধে এটি একদিন পিছিয়ে একই জায়গায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলটির কাউকেই দেখা যায়নি এই বৈঠকে।

সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাদের জন্য অপেক্ষা করে বৈঠক এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু করা হয়। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ অংশ নেন।

এ সময় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সংলাপের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।

জামায়াতে ইসলামী বাদে দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই সংলাপকে ‘গণসম্মিলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ- এই তিনটি ভেন্যুই প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রেখেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। অনুমতি মিললে এর যে কোনো একটিতে অনুষ্ঠিত হবে এই গণসম্মিলন।

এর আগে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো ও বিতরণের কাজ শুরু হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আন্দোলনে সব মানুষের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে।

জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দেয়া হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতে ইসলামী ছিল না। এখনো নেই। জাতীয় সংলাপেও জামায়াত থাকছে না। এ ছাড়া নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

গত বছরের ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়।

বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরুতে সঙ্গী হলেও পরে এতে শামিল হয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক সঙ্গে অংশ নেয় এই জোট। ৬টিতে জয় পায় বিএনপি। অন্যদিকে ২টি আসন পায় গণফোরাম। যদিও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এবং পুনঃনির্বাচনের দাবিতে এখনো তারা শপথ নেননি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে এই জোটের শীর্ষ নেতারা সবাই এই নির্বাচনে পরাজিত হন।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার নিজ আসন ঠাকুরগাঁওয়ে পরাজিত হলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বগুড়া আসনে বিজয়ী হন। সূত্র: যুগান্তর।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: