কারা থাকছেন বিরোধী দলে, কি ঘটছে পর্দার আড়ালে?
নবম ও দশম সংসদ মেয়াদে সরকারের অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ১৪ দলের শরিকদের এবার বিরোধী দলের ভূমিকায় বসাতে চাচ্ছে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ।
তারা চাচ্ছে, ১৪ দলের শরিকরা সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুক। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গত কয়েক দিনে এ বিষয়ে কথাও বলে যাচ্ছেন।
তবে, আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাবের সঙ্গে পুরোপুরি সম্মত হতে পারছে না সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী শরিক দলগুলো।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই উল্টো নীতিতে হাঁটার যে কৌশল নিচ্ছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের যে লক্ষ্য নিয়ে ১৪ দল গঠিত হয়, সেই লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা বিরোধী ও মৌলবাদী শক্তি এখনও চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এ জন্য এ অবস্থায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত ভালো হবে না। নতুন কোনো কৌশল নিতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
আগামী ৩০ জানুয়ারি এ সংসদের প্রথম অধিবেশনের আগেই প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এর যৌক্তিক সমাধান বের করে আনার পক্ষে তারা।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে গঠন হওয়া এ জোটের সঙ্গে শুরুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিপিবি থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরাম শুরুতে এ জোটের সঙ্গে থাকলেও কিছুদিন পর তারা সম্পর্ক রক্ষা করেনি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ ও তরিকত ফেডারেশন। পরে তাতে যুক্ত হয় জাতীয় পার্টি (জেপি) ও বাসদের একাংশ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিক ও জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে নিয়ে মহাজোট গঠন করে নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। ওই সংসদে ও পরবর্তী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেই সরকার গঠন হয়, সেই সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যে সরকার গঠন করেছে, তার মন্ত্রিসভায় ১৪ দল বা মহাজোটের শরিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
এ প্রেক্ষাপটে এইচএম এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়ে ২২ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টি এ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চায় বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকরা গত দুই মেয়াদের মতো এবারও সরকারের অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পক্ষে।
গেল দুই মেয়াদের মতো এবারও নতুন মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিক দলের দুজন নেতার নাম জোরালোভাবে শোনা গেলেও শেষ মুহূর্তে তা আর হয়নি।
নতুন মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলকে না রাখায় নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়। তবে দেরিতে হলেও ১৪ দলের শরিক দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভায় রাখা হবে এমন বিশ্বাসের মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে ভিন্ন চিন্তার কথা জানান।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দেখার ইচ্ছার কথা জানান। এজন্য শরিক দলগুলোকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শও দেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১২ জানুয়ারি দলের যৌথসভায় দলীয় নেত্রী শরিক দলগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন সরকারে এমন মন্তব্য করে নেত্রী বলেছেন, আমি চাই বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি থাকুক। ফলে বিএনপির অনুপস্থিতিতে রাজপথে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এজন্য তিনি শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামীতে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তবে আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছে না সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী শরিক দলগুলো।
তাদের মতে, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল, তার প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এ অবস্থায় উল্টো পথে হাঁটার মতো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত সবার জন্য খারাপ হবে।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দলের শরিকরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে তাদের জন্য ভালো এবং সরকারের জন্যও ভালো।
তিনি বলেন, ১৪ দলীয় ঐক্যজোট একটি রাজনৈতিক জোট। নির্বাচনি জোট আর রাজনৈতিক জোট, এটা ভিন্ন জিনিস। ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক জোটের সম্পর্ক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘এতো দিন তো তাদের (আওয়ামী লীগ) কাজে সমর্থন দিয়ে আসছি। এখন বলছে বিরোধিতা করতে হবে। তাহলে তারাই দেখিয়ে দিক, কি বিরোধিতা করতে হবে। তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যেটা করতে চাচ্ছে, সেটা ভুল করছে। আমরা মনে করি, ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এ অবস্থায় তাদের এ উল্টো পথে যাওয়ার নীতিকে সঠিক মনে করছি না। এতে করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে অনাস্থা বাড়বে।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: