২০টি রেলক্রসিংয়ে গেট ম্যান নেই, ঝুঁকিতেই চলাচল

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৫০ পিএম

নাটোরের ৫৬ কিলোমিটার রেলপথের অন্তত ২০টি স্থানে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে কোন গেট বা গেইট ম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পথচারীসহ যানবাহন চলাচল করছে। অরক্ষিত এসব লেভেল ক্রসিংয়ে সর্তক সাইবোর্ড দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তবে বেশ কিছু লেভেল ক্রসিংয়ে লোকবল নিয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

নাটোর জেলায় প্রায় ৫৬ কিলোমিটার রেলপথের মালঞ্চি-নাটোর ও নাটোর-আব্দুলপুর-রাজশাহী রেলপথের লোকমানপুর স্টেশন পর্যন্ত ১০টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৯টিতেই কোন গেটম্যান নেই। এছাড়া নাটোর-ঈশ্বরদী বাইপাস ও আহসানগঞ্জ রেলপথের বীরকুৎসা স্টেশন পর্যন্ত আরও ১০টিতেও কোন গেটম্যান নেই। ফলে এসব লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকায় কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থী সহ যানবাহন এবং পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে ইয়াছিনপুর, স্বরূপপুর, ঠেঙ্গামারা, বড়পুকুরিয়া, মাড়িয়া নিংটিপাড়া, মাড়িয়া, হাড়ডাঙ্গী, মালিগাছা, গাঁওপাড়া, সাজিপুর, বিষ্ণুপুর, বাঁশবাড়িয়া, চৌধুরী বড়গাছা, রায়আমহাটি, বাসুদেবপুর, আমহাটি, নলডাঙ্গা, মাধনগরও বীরকুৎসা রেলগেট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওইসব ক্রসিংয়ে একদিকে যেমন গেটম্যান নেই, তেমনি রাখা হয়নি কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ফলে এসব উন্মুক্ত এবং অরক্ষিত রেলগেট দিয়ে যানবাহন এবং পথচারী চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। প্রানহানির ঘটনাও ঘটছে।

জেলার রেলপথের মধ্যে বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি ও লোকমানপুর নামে দুটি রেল স্টেশন রয়েছে। এই উপজেলার মাঝ বরাবর লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর হতে পার্বতীপুর অভিমুখে মালঞ্চি রেল স্টেশন এবং আব্দুলপুর হতে রাজশাহী অভিমুখে রয়েছে লোকমানপুর রেল স্টেশন। মালঞ্চি স্টেশনের দুই পাশে রয়েছে ৫টি রেল ক্রসিং। এর মধ্যে মালঞ্চি রেলগেট ব্যতিত কোনটিতেই গেটম্যান নেই।

অপরদিকে লোকমানপুর স্টেশনের দুই পাশের ৫টি রেল ক্রসিংয়ের সবগুলোই অরক্ষিত। এছাড়া ঈশ্বরদী জংশন সংলগ্ন লালপুর উপজেলার মাঝগ্রাম জংশন ও ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হতে আজিমনগর ও আব্দুলপুর জংশন স্টেশন পর্যন্ত অরক্ষিত প্রায় ৪টি এবং নাটোর স্টেশন থেকে সান্তাহার রেল স্টেশনের রেল পথের নলডাঙ্গা উপজেলার বীরকুৎসা রেল স্টেশন পর্যন্ত আরো অন্তত ৭টি অরক্ষিত রেল গেট বা লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব রেল গেট দিয়ে পথচারীসহ যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পথচারী ছাড়াও ওইসব পথের বেশ কয়েকটি দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করে। রাতে ট্রেনের আলো দেখে ও দিনে শব্দ শুনে পারাপার হতে হয়। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং পারাপারের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে দুর্ঘটনা ও ট্রেনে কাটা পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এসব রেলগেট সংলগ্ন এলাকাবাসী জানায়, প্রায় চার বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় একটি নসিমনের নববধূসহ ৩ যাত্রী নিহত হয়। বড় পুকুরিয়া রেলগেটে পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিন বছর আগে মৃত আতাহার আলী সরকারের ছেলে রাজ্জাক আলী সরকার নামের একজন নিহত হন। মাড়িয়া নিংটিপাড়া রেলগেটে চিথলিয়া গ্রামের ফজিলা নামের এক গৃহবধু কাটা পড়েন। মাড়িয়া রেলগেটে গরু নিয়ে পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় মকছেদ নামের এক কৃষকসহ ওই রেলগেটে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সাত জন নিহত হয়েছে।

হাড়ডাঙ্গী রেলগেট সংলগ্ন চা দোকানদার জমসেদ জানান, গত এক বছর আগে তার চোখের সামনে পারাপারের সময় এক ট্রলি চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এতে ট্রলি চালকসহ অন্যরা ছিটকে পড়েন। আব্দুল খালেক সরকার নামে একজন মারা যান। এছাড়া এই লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় প্রতিবছরই যানবাহনসহ পথচারী দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসব রেলগেট পারাপারের সময় নসিমন, খাবারের গাড়ি, সাংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যান রেলের ধাক্কা খেলেও বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গুরুত্বপূর্ণ এসব রেলগেটে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে।
অটো চালক আজিজুর রহমান জানান, রাতে ট্রেনের আলো দেখে ওইসব রেলগেটের ওপর দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হয়। কিন্তু দিনে ট্রেন আসছে কিনা তা বোঝা যায় না। ফলে রেলগেটে গাড়ি থামিয়ে দু’পাশ দেখে পারাপার হতে হয়। ভুক্তভোগীরা এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে রেলগেট সহ গেটম্যান নিয়োগের দাবী করেছেন।

নাটোর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার খান মনিরুজ্জামান বলেন, নাটোর রেলপথ এলাকায় এলজিইডির যেসব কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে সেখানেই অবৈধভাবে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা হওয়ার কারনে রেল ক্রসিং ও দুর্ঘটনা দুটোই বেড়েছে। তবে এ ধরনের বেশ কিছু লেভেল ক্রসিংয়ে নতুন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। গেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে। তবুও রেলের রের্কডের বাইরে ক্রসিং থাকলে বিষয়টি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: