এবার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোড়জোড় শুরু 

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়মী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণ। দলীয় সমর্থক ও শীর্ষ নেতারা মনে করেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় আওয়মী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সুনিশ্চিত।। জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে আগ্রহীদের তালিকা দীর্ঘ। তাই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অপর দিকে বিএনপির অবস্থান এখনও দৃশ্যমান নয়। কী ভাবছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিশাল ভরাডুবির পর দলটি এখনও নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারছে না বলে জানাগেছে। উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে তাদের আগ্রহ কম। আন্দোলনের চিন্তা তাদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে দাবি দলীয় নেতাকর্মীদের।খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ উপজেলার চেয়ারম্যানরা আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই।

এদিকে এবারই প্রথম উপজেলা নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেয়া উদ্যোগে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে।

আওয়মী লীগ সাধারণ সম্পাদক গত (১৩ জানুয়ারি) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তবে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। তবে আমরা চাচ্ছি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এবারের উপজেলা নির্বাচনেও একক প্রার্থী বাছাইয়ে সচেষ্ট থাকব। আশা করি দল যাদের মনোনয়ন দিবে নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে। কোন ভেদাভেদ সৃষ্টি করবেন না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া যায়নি। তাদের অনেককেই এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলের টিকিট দেয়া হতে পারে।

গৌরিপুর উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়মী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ হাসান অনু বলেন, আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু দল আমাকে মনোনয় দেয়নি। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষেই কাজ করেছি। ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের প্রার্থী হয়ে আমি নির্বাচন করেছিলাম। স্বল্প ভোটের ব্যবধানে আমি পরাজিত হয়েছিলাম। আবার দল আমাকে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করবে এবং আমি শতভাগ আশাবাদী জয়ী হয়ে দেশরত্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব।

চলতি বছরের মার্চে প্রথম পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই অনুযায়ী মার্চে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের তালিকা অনুযায়ী কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।

স্থানীয় সরকার আইনে (উপজেলা পরিষদ) বলা রয়েছে, উপজেলা পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভা থেকে ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই হিসাব অনুসারে যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ আগে পূর্ণ হবে, প্রথম পর্যায়ে সেসব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কেন্দ্রীয় চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ চট্টগ্রাম ও সিলেট, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা ও ময়মনসিংহ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক রংপুর ও রাজশাহী, আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। আট সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আহমদ হোসেন সিলেট, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেট ময়মনসিংহ, বি এম মোজাম্মেল হক রংপুর, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বরিশাল, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খুলনা, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজশাহী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম দেখভাল করতে পারেন।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়মী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন মন্তা এই প্রতিবেদকে বলেন, আমরা এবার ভিন্ন চিন্তা ভাবনা করছি। বিশেষ করে দলে যারা বহু বছর ধরে রাজনীতি করছে, তাদেরকেই উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার কথার সুপারিশ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, চেষ্টা থাকবে একক ভাবে কাউকে মনোনয় দেয়া। সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তৃণমূলের ভোটের ব্যবস্থাও করা হতে পারে। আমি নিজেও ময়মনসিংহ সদর উপেজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী। আপনি জেনে খুশি হবেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সারা বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ হয়েছিলাম।

এদিকে দেশের ৪৯৬টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন। তবে এ নির্বাচন যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখানে ব্যক্তিগত ইমেজও বড় হয়ে দাঁড়ায়। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বঞ্চিতরাই সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করবে তা এক প্রকার নিশ্চিত বলে জানা গেছে।

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর
 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: