‘ওস্তাদ এটা নায়িকা, বাঁইচা গেলে আমরা ফাঁইসা যামু’

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৫:০৫ পিএম

কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী অহনা। এরপর চিকিৎসা শেষে গত (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর তিনি অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছিলেন।

হাসপাতাল ছাড়লেও এখনো ছাড়তে পারেননি হুইল চেয়ার। বাসায় গিয়েও কিছুতেই ভুলতে পারছেন না সেই রাতের দুঃসহ ঘটনার কথা।

সেই রাতের ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে এবার গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানালেন অহনা। তিনি বলেন, ‘এক বন্ধুর গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। উত্তরার হাউস বিল্ডিং হয়ে ৭ নম্বরে সেক্টরে পৌঁছালে পাথরবোঝাই ট্রাক হঠাৎ গতি বাড়িয়ে আমাকে ওভারটেক করে। এসময় আমার গাড়ির সামনের অংশে লাগিয়ে দেয়। আমি গাড়িটা একটু আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে ট্রাকটাকে থামাই।’

এরপর গাড়ি থেকে নেমে ট্রাক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি- এটি কী করলেন? জবাবে চালক বলে- ‘যা করছি ঠিকই আছে।’

নিচ থেকে ঠিকমতো কথা বলা ও শোনা যাচ্ছিল না। তখন আমি তাকে নেমে আসতে বলি। কিন্তু সে না আসায় আমি ট্রাকের পা রাখার জায়গায় দাঁড়াই।

এ সময় চালকের পাশে বসে থাকা ১৪-১৬ বছর বয়সী তার সহকারী আমাকে দেখে। ওই ছেলেটি চালককে বলে ওঠে- ‘ওস্তাদ, এটি কিন্তু নায়িকা, উনি বাইচা গেলে আমরা কিন্তু ফাঁইসা যামু!’

এটি শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে লিজাকে পুলিশে কল দিতে বলি। ঠিক তখনই ট্রাকটা চালক ছেড়ে দেয়। আমি শক্ত করে ট্রাকের দরজায় ঝুলে থাকি। চালক শুরুতে আমাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর সে ট্রাক চালিয়ে বিভিন্ন ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে আমাকে বাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে।

আমি যে কীভাবে তখন শক্ত করে এই ঠাণ্ডার মধ্যে ট্রাকের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তা এখন আর বলতে পারব না। ওরা ট্রাকটা নিয়ে সোজা ১২ নম্বর সেক্টরের আগে রেডিকেল মেডিকেলের সামনে নিয়ে যায়।

এর মধ্যে চালক তার সহকারীকে একটি জায়গা দেখিয়ে বলে- ‘এইটারে গাড়িসহ এখানে ফালায়া দিমু। বাঁচলে বাঁচল, মরলে তো গেলই। তোরে যখন বলব তখন দৌড় দিবি।

আমি তাদের কথাবার্তা সবই শুনতে পারছিলাম। ওই সময় আমি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম আর আমার মায়ের মুখটা মনে পড়ছিল। অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম যে, একটু পরই মরে যাব।

হঠাৎ ট্রাকটা হার্ডব্রেক করে একটি সুপারশপের পাশে রাখা কাচের ওপর ফেলে দেয় আমাকে। আমার সৌভাগ্য যে কাচের ওপর পড়িনি।’

এ সময় অহনা আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘খুব ব্যথা হয়। এভাবে দুর্ঘটনায় না পড়লে বুঝতাম না মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়ে।’

এ বিষয়ে অহনা আরে বলেন, ‘কয়েক রাত ধরে ঘুমাতে পারছি না আমি। ঘটনাটি এমনভাবে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি না।’

এর আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রাকচালক ছিল মাদকাসক্ত। অথচ অনেকে মন্তব্য করেছেন আমি নাকি মদ খেয়েছিলাম! আসল সত্যিটা হচ্ছে, মদ আমি খাইনি। মদ খেয়েছিল ট্রাক চালক।’

উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি রাতে শুটিং শেষ করে অহনা তার খালাতো বোন মিতুকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় ফেরার পথে উত্তরার কাবাব ফ্যাক্টরি থেকে কিছুটা সামনে সাত নম্বর সেক্টরের পূর্ব মাথায় একটি বেপরোয়া গতির পাথর বোঝাই ট্রাক সজোরে ধাক্কা দিয়ে অহনার ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষতি করে। অহনা গাড়ি থেকে নেমে ট্রাকচালককে নামতে বলেন। এ সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আবার অহনার গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয় চালক।

গাড়ি থেকে নেমে অহনা প্রতিবাদ করে ট্রাকচালককে নামতে বললে তিনি অহনার সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। এ সময় অহনা নিজেই ট্রাকের দরজা দিয়ে উঠে চালককে নামাতে যান। কিন্তু চালক কথা না শুনে অহনাকে দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায় ট্রাক ছেড়ে দেন। ট্রাকটি অহনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় নিয়ে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে পৌঁছালে স্থানীয়দের বাধায় ট্রাকচালক সজোরে ব্রেক করলে ছিটকে পড়ে আহত হন অহনা। অহনা কোমরের হাড়ে ও পিঠে প্রচণ্ড চোট পান। তাকে উদ্ধার করে মিতু হাসপাতালে ভর্তি করান।

ফেসবুকে ওই ঘটনার ভিডিও শুনে কেউ কেউ বলেছেন, অহনা বাজে ব্যবহার করেছে। ভিডিওটা ছিল খন্ডিত। ভিডিওতে যা দেখেছেন সেটা দুর্ঘটনার শুরুর সময় মাত্র। পুরো ঘটনা না জেনে ফেসবুকে মন্তব্য করা কি ঠিক হল?

ঘটনার বিবরণ দিয়ে অহনা বলেন, আমি যদি ওই সময় ট্রাকে না উঠি তাহলে তো ট্রাক আমার উপর দিয়ে উঠে যায়। আমি ট্রাকে সাধে ঝুলিনি। সঙ্গে থাকা মিতু (খালাতো বোন) ভিডিও বন্ধ করে পুলিশকে কল করতে বলি। এমতাবস্থায ট্রাকচালকের চেহারা বদলে গেল। তখন সে বলেছিল, ‘পুলিশ ডাকছে, দেখাচ্ছি।’ এই বলে ট্রাক চালানো শুরু করে।

ওই সময় অহনাকে মেরে ফেলতে সচেষ্ট হন চালক ও চালকের সহযোগী। বিষয়টি জানিয়ে অহনা বলেন, আমি ট্রাকে ঝুলন্ত অবস্থায়, চালকের সহকারী চালককে বলেছিল, এটা নায়িকা! এটাকে যদি বাঁচায় দেন আমরা ফাইসা যাব।

এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একজন মন্তব্য করেন- নাটক করে তো এজন্য এ রকম হয়েছে। মরে গেলে ভালো হতো।

এ বিষয়ে অহনা বলেন, আজকে আমার জায়গায় যদি তার (মন্তব্যকারী) মা, বোন ও প্রেমিকা থাকতেন তাহলে কি তিনি এরকম বলতে পারতেন।

যোগ করে আরও বলেন, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। পাপ-পূণ্যের বিচার আল্লাহ করবেন। বেঁচে থাকলে আমার সঙ্গে একই ঘটনা যদি আবারও ঘটে আমি প্রতিবাদ করব।

অহনাকে আহত করার ঘটনায় ৯ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন অহনার খালাতো বোন লিজা ইয়াসমীন মিতু। গত রোববার সকালে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রাকচালক সুমন মিয়া ও তার সহকারী রোহানকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলায় গ্রেফতার ট্রাকচালক সুমন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: