উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নাটক চলছে তৃণমূলে!

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:৩৪ পিএম

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে বড়সড় নাটক চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। সেই নাটক মঞ্চস্থ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে কে কার সমর্থক তা বিবেচনায় আনছেন এবং তার আলোকেই কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী ত্যাগী, সৎ ও জনপ্রিয় প্রার্থীরা। 

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীদের ভোটে বা মৌনসমর্থনকে উপেক্ষা করে রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ এবং আওয়ামী বিদ্বেষপূর্ণ লোকদের নাম কেন্দ্রে পাঠাতেও পিছুপা হচ্ছে না স্থানীয় শীর্ষ নেতারা বলে জানা যায়। কর্মীদের মতে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রুপিং রাজনীতি এর জন্য দায়ী অর্থাৎ মশারির ভিতর মশারি তৈরি করাই এমন নাটক।

ইতোমধ্যে তৃণমূলের প্রার্থীদের পাঠানো নামের তালিকা নিয়ে নানা অভিযোগ কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। এর পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করে বার্তা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে দুই ধাপের প্রার্থী তালিকায় যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে, কেন্দ্র তাদের নিজস্ব মাঠ জরিপে। কিছু ভুলত্রুটি আছে তাও সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যে সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড এই তালিকা চূড়ান্ত করেছে। যারা সৎ, ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব তাদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য আওয়মী লীগ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় উন্মুক্ত করেদেন। এতে করে কেন্দ্রের নির্দেশানা অনুযায়ী ৩ জনের প্রার্থী পাঠানোর বিষয়টি আর প্রাধন্য পাচ্ছে না। 

কারণ তৃণমূলের নেতারা ইতোমধ্যে বহু যোগ্য প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে না পাঠিয়ে তাদের পছন্দসই আজ্ঞাবহ প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে, যা নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। এর ফলে ৩ প্রার্থী পাঠানোর সুপারিশ কার্যত বাতিল এবং কেন্দ্রীয় জরিপের ভিত্তিতেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রত্যাশীদের।

এদিকে সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের পছন্দের প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ তৃণমূলের বাছাইয়ে ১১ নম্বরে ছিল, তার নির্দেশিত প্রার্থী কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন পায়নি। পেয়েছে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হাওয়া প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বঙ্গবাসী। এ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতার নির্দেশিত প্রার্থীও বাতিল! স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ প্রার্থীদের মনোনয় দিবে কেন্দ্র তা এক প্রকার নিশ্চিত। বিচ্ছিন্ন কোন কিছু যদি না ঘটে?

অপরদিকে গত ৩০ জানুয়ারি ময়মনসিংহ কোতয়ালী আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত ২৮০ নেতাকর্মী উচ্চ কণ্ঠে, হাত তুলে ও এক বাক্যে আশরাফ হোসাইনকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেন এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে একক প্রার্থী হিসেবে সৎ ও কর্মীবান্ধব আশরাফ হোসাইনের নাম পাঠানোর দাবি জানানো হয়। অভিযোগ আছে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের ইশারাতে কোতয়ালী আওয়ামী লীগের আর একটি বর্ধিত সভার আলোকে আশরাফ হোসাইনে এর নাম বাতিল করে, এবং কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে জেলার একক ক্ষমতাধর নেতার সুপরিশ কৃত নামের তালিক। এ নিয়ে ময়মনসিংহে চলছে নানা রকম মুখরোচক আলোচনা।

কোতয়ালী আওয়ামী লীগের কোন ক্ষমতা নেই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ের দাবি করে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনালে মহানগর আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার শেলটারে কোতয়ালী আওয়ামী লীগের বেনারে একটি অবৈধ সভা হয়েছে। যদিও এমন সভা আহ্বান করার এখতিয়ার মহানগর আওয়ামী লীগের নেই। তাই জেলা আওয়ামী লীগ এমন অবৈধ সভার বিপরীতে কোতয়ালী আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশের আলোকে ৩ জনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। কোতয়ালী আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম কেউ নয়। তাকে কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়েছে? এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য, আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে নিউজ করছেন। কারও পক্ষে অবস্থান নেওয়া জন্য।

গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইনের নাম কেন্দ্রে না পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, আমি কারও বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে চাই না। আমি কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি মনে করে আমি যোগ্য তবে আমাকে মনোনয়ন দিবে, নয়তো দিবে না। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।

জানা গেছে, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু জেলার ১২টি উপজেলা পরিষদেই একজন করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় এ তালিকায় থাকা তিনজন একক প্রার্থীর নাম বাদ দিয়েছে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড।

আবার জরিপকে প্রাধান্য দিয়ে তৃণমূলের সুপারিশে নাম থাকলেও বিতর্ক থাকায় বর্তমান চেয়ারম্যানদের অনেককে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী বেছে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মিন্টু দলের মনোনয়ন চাইলেও তাকে বাদ দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান বিশ্বাসকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী বহু প্রার্থীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তৃণমূলের অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীদের বাদ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। যা স্থানীয় সরাকার মনোনয়ন বোর্ডের নজরে এসেছে। তার আলোকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ফরম ক্রয় উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মাঠ জরিপের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সৎ , ত্যাগী, কর্মীবান্ধব ও বিতর্কমুক্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: