জীবনে ব্যর্থতা আসে যে কারণে!

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:৪৮ পিএম

আপনি কি জীবনে ব্যর্থ হয়েছেন মনে করছেন? অথবা ভাবছেন আপনিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুঃখী ব্যক্তি? তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জীবনের ব্যর্থতা কখন আসে? যখন আপনি চাওয়া এবং পাওয়ার মাজখানে একটা দেয়াল দেখতে পাবেন। অনেকেই ধারণা করেন জীবনে সফলতার জন্য ভাগ্য লাগে। এ কথাটি একদমই একটি ভ্রান্ত ধারণা। ভাগ্যের সাথে আপনার সফলতা বা ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক নেই। সফলতা নির্ভর করে জীবনের অভ্যাস এবং আপনার মন-মানসিকতার উপর।

সত্যি বলতে আমরা পরিশ্রম করতে চাই না। সব সময় সহজ কোন রাস্তা খুঁজে বেড়াই কিভাবে নিজের কাজ শেষ করে ফেলবো। অর্থাৎ শর্টকার্টের সাহায্য নিয়ে কোন কাজ শেষ করব এমন লক্ষ্য থাকে। পরিশ্রম করার মত ইচ্ছেটা আমাদের কম মানুষের মধ্যেই থাকে। আমরা শরীরে ঘাম না ঝরিয়ে চাই কাজ করে ফেলতে। আর এমন মানসিকতাই আমাদের ব্যর্থতার জন্ম দেয়।

আমরা বেশির ভাগ সময়ই দেখি শিক্ষালয়, কর্মস্থল, পেশাজীবন ও খেলাধুলাসহ জীবনের সর্বত্রই অনেক প্রতিভাবান লোক রয়েছে। তবে মনে রাখা উচিত, শুধু প্রতিভা দিয়েই সফলতা অর্জন হয় না। সফলতার জন্য প্রতিভার সাথে প্রয়োজন ধৈর্য, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম।

যেখানে পরিশ্রম সেখান থেকেই আমরা পিছপা হই। যদি আমরা একাগ্রতাচিত্তে সিদ্বান্ত নেই পরিশ্রম আমি করবই তাহলে সফলতা আপনাকে দেখা দিবেই। তাহলে এখন দেখি পরিশ্রমী হতে হলে আমাদের কি করতে হবে।

১) নিজের কাজটা কি তা প্রথমে বুঝে নিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কাজ দেখেই আমরা ভয় পেয়ে যাই যে, আমি মনে হয় পারব না। ঠান্ডা মাথায় দেখুন আপনার কাজটা কিভাবে করতে হয়, কি কি কাজ করতে হবে। আর সব পেশাতেই কাজকর্ম গোছানো পরিপাটি আপনাকে বাড়তি প্রেরণা জোগাবে। তাই সবসময় সুন্দর, গোছানো ও পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন।

২) অনেক কাজ দেখলে আমাদের মাথা ঘুরে যায়। ঠান্ডা মাথায় কাজগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। এতে করে দ্রুত আপনার কাজ শেষ হবে। দরকার হলে কাজগুলো একটা ডায়রিতে ভাগ করে লিখে নিন। এতে করে কোনটার পর কোন কাজ করবেন তা মনে থাকবে।

৩) পেশাজীবন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সাথে খামখেয়ালিপণা করলে পরে আপনাকে পঁস্তাতে হবে। ধরুন আপনি এক পেশাকে পছন্দ করেন। কিন্তু সেই পেশায় আপনি কোনভাবেই এন্ট্রি নিতে পারছেন না। চেষ্টা করছেন আর অন্যদিকে জীবিকার তাগিদে অপছন্দের কোন পেশায় কাজ করছেন। দেখা যাচ্ছে আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে মন দিচ্ছেন না। খামখেয়ালিপণা করে কাজ করছেন। এতে করে আপনার মানসিকতাও নষ্ট হচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানে আপনি বদনামের ভাগিদার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে আপনি যেখানে কাজ করেন সেখানেই নিজেকে যোগ্য হিসেবে তুলে ধরুন। যদি পেশা ভাল না লাগে ছেড়ে দিন।

৪) আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা অন্যের লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে থাকি। অন্য একজন অনেকদূর চলে গেছে সেদিকে তাকিয়ে হতাশা প্রকাশ করি। আমরা অন্যের লক্ষ্যপূরণ দেখে সেখান থেকে উৎসাহ বা উদ্দীপণা নিতে পারি। নিজেকে বলতে হবে সে পারলে আমি কেন পারবো না? নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকতে হবে।

৫) কঠোর পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। সৌভাগ্য নিয়েই পৃথিবীতে কোনো মানুষের জন্ম হয় না। কর্মের মাধ্যমে তার ভাগ্য গড়ে নিতে হয়। পরিশ্রমই সৌভাগ্য বয়ে আনে। সুতরাং পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কাজ করতে হবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কাজ করতে গিয়ে হতাশায় পরে যেতে পারেন। কিন্তু সে জন্য কাজ বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। ব্যর্থতার পরেই আসে সফলতা। এই জন্য সবসময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখবেন।

৬) আরেকটি বড় সমস্যা মাঝে মধ্যে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটা হয়ত হতাশা থেকেও হতে পারে, আবার ওভার কনফিডেন্স এর কারণে হতে পারে। সব কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। যার অতিক্রম করা আমাদের কারও উচিত নয়। হতাশা অনেক সময় মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়। তখন নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এজন্য যতই আঘাত আসুক নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রেখে সেগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে। থাকতে হবে ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম।

৭) নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হোন। কর্মজীবনে সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে নিজের কাজকে সফলভাবে শেষ করতে পারা। প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীর কাছে থেকে সবসময় প্রত্যাশিত কাজ চায়। সেক্ষেত্রে নিজের কাজ ও দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

৮) বন্ধু তৈরি করুন। মনে রাখবেন, সফলতা কখনও একা আসে না। কিন্তু কখনোই একা একা আপনি বড় কিছুই করতে পারবেন না। পরিশ্রমী মানুষের সাথে মিশুন। সফল মানুষের সাথে মিশুন। দেখবেন ঐ মানুষগুলোর আচার আচারণ চরিত্র কিছুটা হলেও আপনার মধ্যে চলে আসবে। কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।

লেখক:- 
আমিরুল ইসলাম
বিএসসি, এমএসসি (মনোবিজ্ঞান)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: