কুমিল্লার ৮০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:৫০ পিএম

২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণে প্রতি বছরই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে যাবে স্মৃতির মিনার। ভাষা আন্দোলনের চেতনা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হলে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। কিন্তু এখনো কুমিল্লার ৮০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরও জেলার সব বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার।

জানা যায়, কুমিল্লা ১টি মহানগর, ৮টি পৌরসভা ও ১৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। জেলার ১৮টি উপজেলায় ২১০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৪ টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৯৮টি কলেজ, ৩৭২টি মাদ্রাসার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় অর্থায়নে শহীদ মিনার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৮৯টিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৭২টি মাদ্রাসার কোনটিতে শহীদ মিনার নেই, ৯৮টি কলেজ ও ৩৪টি স্কুল এন্ড কলেজের সবকটিতে শহীদ মিনার রয়েছে। অর্ধেকের ও বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়।  প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও গ্রামে পাড়া মহল্লায় অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানানো হয়।

কুমিল্লার জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চান্দিনা উপজেলায় ১৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৮টিতে ২৩টি মাদ্রাসার ২৩টি ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। আদর্শ সদরে ১০৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৮টি, লাকসামে ৮০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৫টি, দেবিদ্বারে ১৮৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহিদ মিনার ৯১টি, মুরাদনগরে ২০৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৬৬টি, দাউদকান্দিতে ১৪৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৫টি,  ব্রাহ্মণপাড়ায় ১০৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ২০টি, বরুড়ায় ১৫৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৪১টি, বুড়িচংয়ে ১৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ২০টি, চান্দিনায় ১৩৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ২২টি, হোমনায় ৯২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ১২টি, নাঙ্গলকোটে ১৫০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৮টি, মেঘনায় ৬৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৬টি, মনোহরগঞ্জে ১০৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৭টি, তিতাসে ৯২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ৪০টি ও সদর দক্ষিণে ১৫৩টি  বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ১৩টি এবং চৌদ্দগ্রামে ১৭৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার ১৫টি।

বুড়িচং উপজেলার কাবিলা হাজী জুনাব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুন্নেছা সীমা বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তাই শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বা শিক্ষা বিভাগেরও কোনো উদ্যোগ নেই।’

মেঘনা উপজেলার লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলীম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার না থাকায় তারা এ বিষয়ে কিছুই অনুধাবন করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন।’

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, নিজের ভাষা ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জানার অধিকার রয়েছে। তারা যে বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করবে সেখানে শহীদ মিনার থাকবে না, তা হতে পারে না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সিদ্দিক বলেন, ‘অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। আমরা এসব বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।’

শিক্ষার্থীদের মহান ভাষা দিবস সর্ম্পকে সচেতন করতে শহীদ মিনারের প্রয়োজন রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আরও আগেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল। সরকার এ ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: