শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ!

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ হতে চলেছে পঞ্চশ দিন। অথচ এর রেশ যেন এখনও দৃশ্যমান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েও যেন হচ্ছে না শেষ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ জাতীয় নির্বাচনের আমেজ শেষ হতে না হতেই উপজেলা নির্বাচন শুরু হলেও এই নির্বাচনে নেই কোন উৎসব মুখর পরিবেশ। 

কোন প্রাণ নেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অভিযোগ করে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে বা রুচি কোনটাই নেই। নির্বাচন হবে আন্দময় অথচ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর কিছু বলতে চাননি তিনি।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশানার বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল বলেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল। আগামী উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সংসদ নির্বাচনের মতো পরিবেশ অব্যাহত থাকবে আশা করেন তিনি।

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উপজেলা নির্বাচনের জন্য গঠিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় বলেছেন যে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুতায় রেকর্ডে নন্দিত হয়ে থাকবে। তা নন্দিত না নিন্দিত হয়ে থাকবে ইতিহাসে। যে নির্বাচনে কেন্দ্রের পর কেন্দ্র বিরোধী জোট শূন্য ভোট পায়। ভোটের আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভরে ফেলা হয়। সেই নির্বাচন তো রেকর্ডে থাকবেই। কারণ গত ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই রকম প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচন আমার চোখে দেখিনি। ইতিহাসে রেকর্ডে থাকবে প্রধান নির্বাচন কশিনারের অপকর্মের সব রেকর্ড।

অপরদিকে সিইসির বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে সময় নেননি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশে কখনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কোনও উদাহরণ বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনের একটা ধরণ আমরা দেখি, আবার এর বাইরে বের হয়ে নির্বাচনটাকে গ্রহণযোগ্য করার একটা চেষ্টাও দেখি। ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল, ২০১৪ সালেও একটি নির্বাচন দেখেছি, কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, নির্বাচনে এতো বড় একটা অনিয়ম ঘটে গেছে, এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। আপনারা ভাবতে পারেন যে আপনারা নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু জনগণ জানে কী ঘটেছিল সেই রাতে। কাজেই সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে জনগণের প্রতিনিধিরা এবং সামাজিক চুক্তি বলে যে চুক্তি আছে তার নবায়ন ঘটাতে হবে। সেই সামাজিক চুক্তি চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি, এটা জাতিকে বড় ধরনের বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ গ্রহণযোগ্য হয়নি দাবি করে পুনরায় অর্থবহ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাহদিন মালিক। সত্যি বলতে, ৩০ ডিসেম্বর কার্যত কোন নির্বাচনই হয়নি। যা হয়েছে তা দেশবাসীর সাথে প্রহসন। এমন নির্বাচনের মাধমে ক্ষমতায় থাকা নৈতিক দিক দিয়ে ঠিন নয়।

এদিকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের একাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গে মূল্যায়নকে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে এক সংবাদ সম্মোলনে বলেছেন, বিশ্বের কোথাও ১০০ ভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তার নজির নেই। ডালাও ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে, তবে এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সুষ্ঠু নির্বাচন এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা অনেকে মেনে নিতে পাচ্ছে না। যাই হোক এসব করে কোন লাভ হবে না। বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ভালো করত বিএনপি। 

বিডি২৪লাইভ/এসবি/এমআর
 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: