কোন পথে খালেদার মুক্তি?

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:১০ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীণ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থান এ নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈক দল বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, গণ আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। জেলে যাওয়ার পর বড় ধরণের কোন আন্দোলন কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তারা ভেবেছিল, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দলীয় প্রধানকে মুক্ত করবে। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো ভাবেই মিলছে না মুক্তি। এখন এই আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। আন্দোলন ছাড়া যেহেতু মুক্তি মিলবে না তো কেন অন্দোলন নেই এমনটাই বলছেন দলের কর্মীরা-সমর্থকরা।

কর্মীরা-সমর্থকরা জানতে চায় কবে মুক্তি পাবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে গত বুধবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা কর্মী-সমর্থকদের তোপের মুখে পড়ে। হলরুমে শুরু হয় হট্টগোল। সভায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে জানতে চায়।

এসময় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, কর্মসূচি আসবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। এরপর ফখরুল ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, দাঁড়ান, হলে বসে চিৎকার করলে হবে না। আপনারা নিজেদের দুর্বল ভাবেন কেন? মনোবল হারাবেন না। আমাদেরকে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেই জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আইনি প্রাক্রয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। একমাত্র পথ হচ্ছে আন্দোলন। সেই জন্যই আমাদের সুপরিকল্পিত আন্দোলন করতে হবে। সেই ভাবেই আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আর সে জন্য সবাইকে অপেক্ষ করতে হবে।

একই ভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি এত বড় একটি রাজনৈতিক দল, সারাদেশে সংগঠন আছে, কর্মী-সমর্থক আছে তবু কেন আমাদের নেত্রীর মুক্তি হচ্ছে না? তিনি বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামি ও আন্দোলন করতে পারি তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, আন্দোলন আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মাতা হচ্ছে খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।

এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় এক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মানববন্ধনে বলেছেন, ‘সংগ্রাম ছাড়া উপায় নেই। তাই সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। আমি সকল দলকে আহ্বান করছি। সকল দলের ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামুন।’

সরকারের বিচার ব্যবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না মন্তব্য করে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সরকার দলীয় বিচার ব্যবস্থায় সুবিচার পাবেন না। ওনাকে জনগণের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং সকলের সম্মিলিত ভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে তিনি মুক্তি পাবেন।’

গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক মানববন্ধনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দিয়ে অলিখিত বাকশাল চিরস্থায়ী করতে চায়। আগামী দিনে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের মানুষের কাছে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিব।

নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির নেতারা বলছে, আন্দোনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে গেছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পরাজয়ের পর কোন আন্দোলন করেনি বিএনপি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত গণশুনানির পর দলটির বড় ধরনের অন্দোলন দেয়ার কথা রয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন গণশুনানির পর তারা বড় ধরণের আন্দোলন শুরু করবেন। আর তারা মনে করছেন, এতেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে।

বিডি২৪লাইভ/এসআই/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: