অবুঝ সন্তানরা জানে না তার বাবা কোথায়!

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৫:৪১ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়তেন কুমিল্লার ছেলে কাউছার আহমেদ। পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী জামে মসজিদ এলাকার আল-মদিনা ফার্মেসিরও স্বত্বাধিকারী। তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলায়।  এছাড়াও কুমিল্লা অপর আরেক জন ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের খবির উদ্দিন নাহিদের(৩৩)। 

কাউছার দোকানটির আয় দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। পাশাপাশি পরিবারের ভরণপোষণের ভারও নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। বুধবার রাতের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে মারা গেছেন কাউছার। তাঁর ফার্মেসিও ছাই হয়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়। সঙ্গে দোকানের চিকিৎসকও মারা গেছেন। তাঁদের দুজনের লাশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। মর্গের সামনে বৃহস্পতিবার সকালে বিলাপ করছিলেন কাউছারের মা ও ভাই হাফিজ আহমেদ।

হাফিজ আহমেদ জানান, আর্থিক টানাটানির কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেছেন ভাই কাউছার। স্বপ্ন ছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একটি বড় চাকরি করবেন। সেই ভাই চোখের নিমিশেই চলে গেলেন।

এদিকে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন কাউছারের মা। বুক চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার কাউছার কই। আমার বুকের ধনকে আমার বুকে এনে দে।’ আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ভর্তি পরীক্ষায় ‘ডি’ ইউনিটে ১৭তম মেধায় ভর্তি হন কাওসার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

তার বন্ধু সূর্যসেন হলের ছাত্র শরীফুল আলম বলেন, আমাদের মধ্যে কাওসার ছিল খুবই মেধাবী ও পরিশ্রমী। নিজের খরচ নিজেই বহন করত। সে জন্য ফার্মেসির দোকান দিয়েছিল। কাওসার মাদ্রাসায় পড়ত, কোরআনে হাফেজ ছিল। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

তিনি বলেন, সে মাঝেমধ্যে সূর্যসেন হলেও এসে থাকত। আবার বাসায়ও থাকত। ওষুধের দোকানটাও সেই চালাত। কাওসার বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। আবদুল্লাহ নামে একটি ছেলে এবং নুসাইবা নামে একটি মেয়ে আছে তার।

শরীফুল আলম আরও বলেন, কাওসারের ইচ্ছা ছিল বড় ব্যাংকার হবে, পরিবারের হাল ধরবে। ওর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। ওর মতো মেধাবীদের এমন করে পুড়ে মারা যাওয়া রাষ্ট্রের চরমতম ব্যর্থতা।

কাউছারের ভাই হাফিজ আরো বলেন, দের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানায়। তারা সপরিবারে পুরান ঢাকায় থাকতেন। আগুন লাগার সময় আমার ভাই ও ডাক্তার ফার্মেসির ভেতরে ছিলে। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর পরই তাঁরা দোকান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বলে আমরা শুনেছি।

কিন্তু তাদের দোকান থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। ফার্মেসির ভেতরেই তারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্র। তিনি এতটা বোকা নন যে, দোকানের ভেতরে থেকেই পুড়ে মারা যাবেন।

কাউছারের স্বজনদের মতো আরো শত শত মানুষ স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান পুরো ঢাকা মেডিকেল চত্বর। বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছেন কেউ কেউ। যারাই সান্তনা দিতে আসছেন তাঁরাও কাঁদছেন।

চকবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭৮ জন। এদের অধিকাংশের লাশই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আনা হয়েছে। সকাল থেকেই মর্গের সামনে আত্মীয়-স্বজনদের ভিড় জমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন।

তারা বলেন, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালন করা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এখানে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আছে, এগুলো খুবই বিস্ফোরণ ঘটছে। এগুলোর টেম্পার অনেক বেশি। এগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আমাদের ফায়ার ফাইটিং করতে হচ্ছে। রেসিডেনশিয়াল এরিয়াতে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কথা না। চকবাজার এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে ঢাকা চকবাজারে অগ্নি কান্ডে নিহত ৭৬ জনের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের নাহিদও রয়েছেন। নিহত নাহিদ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের আতকারা গ্রামের দ: পাড়ার সৈয়দ কামাল উদ্দিন লাভলু ছেলে। চকবাজারে অগ্নিকান্ডের ৭০ জনের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দীঘি ইউনিয়নের খবির উদ্দিন আগুনে পুড়ে নিহত হয়।জানাযায় যে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের আতাকরা গ্রামের দ: পাড়ার সৈয়দ কামাল উদ্দিন লাভলু ছেলে মো: খবির উদ্দিন ( নাহিদ) ৩৫ নিহত হয়েছে ।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: