পাক-ভারতের অঘোষিত আকাশযুদ্ধ!

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:২০ পিএম

পাকিস্তানের বালাকোর্টে নিয়ন্ত্রণরেখা লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) পার হয়ে হামলার করার পরদিনিই শুরু গেছে পাক-ভারত অঘোষিত আকাশযুদ্ধ। পাকিস্তানের দাবি, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ায় আকাশপথের দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। আটক করেছে এক পাইলটকে। আর ভারতের দাবি, তারাও ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান। তবে হারিয়েছে নিজেদের একটি যুদ্ধবিমান।

দুই দেশের এমন উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীরা প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। সেই বৈঠকের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের বিশেষায়িত বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪৯ জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। ওই ঘটনার ১৩ দিন পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে হামলা চালায় ভারতীয় যুদ্ধবিমান। এ নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর টান টান উত্তেজনার মধ্যেই দুই দেশের সেনাদের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে গুলিবিনিময় হয়। রাতে গোলাবিনিময়ও হয়। রাত পোহাতেই বালাকোটে হামলার বদলা নেয় পাকিস্তান। 

এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বলেন, বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভারতীয় যুদ্ধবিমান মিগ-২১ নিয়ন্ত্রণরেখা পার হলে পাকিস্তান দুটি বিমান গুলি করে নামায়। দুই পাইলট তাঁদের হাতে বন্দী। একজন আহত হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অবশ্য আসিফ গফুর জানান, তাঁদের হাতে ভারতের একজন পাইলটই আটক হয়েছেন।

পাকিস্তানের এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়নি ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন অভিযানের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান বুধবার সকালে ভারতীয় এলাকায় হানা দেয়। তাদের যুদ্ধবিমানের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি। কিন্তু ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হয়।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ওই প্রতিরোধের সময় একটি পাকিস্তানি এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভারতীয় মিগ-২১ বাইসন। বিমানটি নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে বিধ্বস্ত হয়। এই প্রতিরোধে ভারতও একটা মিগ-২১ হারিয়েছে। পাইলট নিখোঁজ।’

পাইলট উইং কমান্ডার ভি অভিনন্দনকে নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে ভারত বলেছে, এর মাধ্যমে পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। পাইলটকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

তবে ওই পাইলটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চায়ের মগ হাতে কথা বলছেন ওই পাইলট।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক জনসভায় বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, দেশকে রসাতলে যেতে দেব না, থমকে যেতে দেব না, মচকাব না। ভারতমাতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার সম্মান রক্ষা করব। আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে পারি, দেশের নেতৃত্ব উপযুক্ত হাতেই আছে।’এরপর তিনি আর এই উত্তেজনা নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর পেয়েই নয়াদিল্লিতে নিজের সরকারি বাসভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। প্রায় একই সময়ে ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরমাণুবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রয়েছে যাদের, তারা সবাই ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে ইমরান বলেন, ‘আমাদের দেশে ঢুকলে আমরাও যে তা করতে পারি, সেটা বোঝানোই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা কী করতে পারি, কতটা ক্ষমতা, এটা নমুনা। দুটো মিগ বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। এখন আমাদের বুদ্ধি, বিবেচনা ও প্রজ্ঞা দ্বারা পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।’

ভারতকে সতর্ক করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তেজনা বেড়ে গেলে আমার বা নরেন্দ্র মোদি—কারও হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।’ ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আলোচনার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া জরুরি।’

প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইমরানের এমন বক্তব্যের পরেই পাকিস্তানের উপহাই কমিশনারকে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।

ভুপাতিত করার পর প্রথম বিবৃতি আসে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, ‘সংঘাত বাড়ানোর কোনো আগ্রহ পাকিস্তানের নেই। ভারতের সঙ্গে শান্তি স্থাপনই পাকিস্তানের কাম্য। ভারতের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে এই অভিযান স্রেফ নিজেদের শক্তি দেখাতে। এটাই আমরা বোঝাতে চেয়েছি যে প্রয়োজনে আমরা পুরোপুরি তৈরি। এই কারণে দিনের আলোয় এই অভিযান চালানো হয়েছে।’

পাকিস্তানের প্রতি অভিযোগ করে রাশিয়া ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনে সুষমা বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের স্বর্গ হয়ে উঠেছে। আত্মরক্ষার জন্যই ভারত বাধ্য হয়ে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হোক ভারত চায় না। ভারত বরাবরের মতোই দায়িত্বশীল ও সংযত।

এদিকে বুধবার সন্ধায় কাশ্মীরের বদগাম এলাকায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এতে থাকা বিমানবাহিনীর ছয় কর্মকর্তাই নিহত হন। একজন বেসামরিক লোকও নিহত হয়েছেন। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানা যায়নি। তবে ওই সময় ওই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের মধ্যে গোলাগুলি চলছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

দু’দেশের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এবং দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হওয়ায় গতকাল পাকিস্তানমুখী ফ্লাইট বাতিল করেছে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস। এসব এয়ারলাইনসের মধ্যে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ার ও শ্রীলঙ্কা এয়ারলাইনস অন্যতম। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজসহ কয়েকটি এয়ারলাইনস পাকিস্তান অভিমুখী যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের গতিপথ ঘুরিয়ে নেয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের ৯টি বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা স্থগিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। 

বিডি২৪লাইভ/এসএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: