বৃষ্টিস্নাত মনোমুগ্ধকর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:০৯ পিএম

ভোর ৫ টা বেজে ১০ মিনিট হঠাৎ আকাশে বিজলির বিকট শব্দ। বিদ্যুৎ গতিতে বিজলির শব্দ এক হল থেকে শুরু করে শেষ হয় অন্য হলের শেষ প্রান্তে। এই বুঝি মাথার উপর বাজ পড়লো। হলের জানালার গ্লাস খুলতেই বিজলির আলোর ঝিলিক লাগে চোখে। ভয়ে চমকে উঠে মন, কম্বল মাথায় দিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে শরীর। আর হলের রুমে একা থাকলে তো কোন কথাই নেই। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তো মন সৃষ্টিকর্তার নাম জপছে। ভোর শেষে সকাল হয়। রাতের ভয়টা কেটে যায়। হলের রুমের জানালা খুলতেই আকাশের গুড়গুড় বৃষ্টি আর বৈরি বাতাস যেন মনে দোলা দিয়ে যায়।

বলছি সবুজের মহাসমারোহে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৃষ্টিস্নাত মনোমুগ্ধকর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গল্প। বৃষ্টিতে সত্যি জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস এক মোহময় রূপ ধারণ করে। যার প্রেমে পড়ে যায় পথচারী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিও। এক পশলা বৃষ্টি প্রাণ ছুঁয়ে যায় ক্যাম্পাসবাসীর। বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের চারিদিক যেন ভরে যায় নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে। সারা সারি গাছের পাতা থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি কণা মাথার উপর জেকে বসে। বৃষ্টির কণার আলতো ছোঁয়া মনকে পুলকিত করে এক অন্য রকম অনুভূতি দেয়।

বিশেষ করে ভৌগলিক অবস্থান এবং অসংখ্যা সবুজ সারা সারি গাছ-গাছালির প্রাচুর্যতার কারণে এই ক্যাম্পাসে বৃষ্টি অনেক সৌন্দর্যের বরতা নিয়ে আসে। ক্যাম্পাসের লাল ভবনের ফাঁক দিয়ে চুঁয়ে পড়া বৃষ্টি যেন মন ছুঁয়ে যায়। বৃষ্টিতে লাল ইটের দালানগুলোকে লাগে অপরূপ। পুরো ক্যাম্পাসে আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিচু পিচঢালা রাস্তাগুলোকে চকচকে আয়নার মত দেখায়। বৃষ্টির পানি আপন করে নেয় রাস্তার সমস্ত ধূলোবালি কণাকে। রাস্তার দু’ধারে ঘন গাছের সারি পাহাড়ি রাস্তার মত একবার উঁচু হওয়া আবার ঢালু হয়ে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগরের প্রত্যেকটি রাস্তা বৃষ্টি দিনে অপরূপ সাজে সেঁজে থাকে।

সারা রাতের অবিরাম বর্ষণ শেষে ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে উঠতেই ঝিরঝির বৃষ্টি আর হালকা বাতাস যেন সারা দিনটাকেই পুলকিত করে দেয়। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুতে বাংলাদেশের প্রকৃতি ছয় রুপে সাঁজে। সেটা যদি হয় জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস তাহলে তো পুরো বাহারি রুপে ভরপুর হয় এই নয়নাভিরাম ক্যাম্পাস।

এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে ছয়টি ঋতু ছয়রকম আর্শীবাদ নিয়ে আসে। একেক সময় ক্যাম্পাসের বৈচিত্র্য দেখা দেয় একেক রকম। বসন্ত ঋতু তার মধ্যে অন্যতম। ঋতুরাজ বসন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে এক আনন্দের মহামিলন। কর্মব্যস্ত সারাদিন ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, সাক্ষাৎকারের মতো বিভিন্ন রকম ধরাবাধা একাডেমিক কাজ থেকে হাফ ছেড়ে বাচঁতে শিক্ষার্থীরা বোধ হয় একটু বৃষ্টির দিনের অপেক্ষায় থাকে। বৃষ্টি এসেছে তো ক্লাসে মন বসানো দায়। ক্লাস শেষ হতে না হতেই শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের সাথে রাস্তায়, বিভিন্ন চত্ত্বরে, শহীদ মিনারে ছুটে যায় বৃষ্টি উপভোগ করতে। অনেকে জানালার পাশে হাত ভেজায়, বিভাগ, হলের বারান্দা বা বেলকনিতে বসে বৃষ্টি দেখে আর শৈশবকালের মধুর স্মৃতি মনে করে। অনেকে প্রিয়জনকে মনে করে চিঠি লিখে, কিন্তু সেই চিঠি আর ফেলা হয় না ডাকবাক্সে।

হঠাৎ পিছন থেকে সহপাঠী এসে দেখে নেয় প্রিয়জনকে লিখতে থাকা চিঠির কয়েকটি মাধুরি মাখা শব্দ। আর সেই নিয়ে চলে হাসাহাসি, খুনসুটি। একটু পরেই অন্য একদল সহপাঠীকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে মন টিকে না। হলে পড়তে বসা ছেলে বা মেয়েটিরও তখন মন বসে না পড়ার টেবিলে। হলের বন্ধুদের সাথে শৈশবকালের স্মৃতি রোমাঞ্চ করতে ফুটবল নিয়ে মাঠে দেয় দৌড়। কাদামাখা, বৃষ্টির পানিতে গড়াগড়ি, বন্ধুদের সাথে দুষ্টামি। সিনিয়র জুনিয়রের মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো খেলার মাঠ। খেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তারপর হলে ফেরার পালা। এবার রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে হলে রান্না হয় ভূনা খিচুড়ি, মুড়িমাখা খাওয়া আর আড্ডা। এভাবেই কেটে যায় শিক্ষার্থীদের বৃষ্টির দিনের হল জীবন।

শীতকালে অতিথি পাখি, লাল-সাদা শাপলা আর প্রজাপতির উড়ন্ত ডানা দেখার জন্য যেমন বিপুল অতিথির আগমন ঘটে এখানে, তেমনি বৃষ্টি উপভোগ করতে, বৃষ্টির মোহে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে, ইট পাথরে ঘেরা শহুরের কোলাহল থেকে দম ফেলার জন্য কিংবা প্রকৃতির হৃদয়স্পর্শী পেতেও বৃষ্টির দিনে অনেক দর্শণার্থী তাদের প্রিয়জন, পরিবার নিয়ে ছুটে আসে এই মমতাময়ীর কোলে। কেউবা আসে বৃষ্টি দেখতে তার প্রিয়জন বা প্রিয়সীকে নিয়ে। যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজের সমাহার। বৃষ্টির দিনে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করতে কার না ভাল লাগে!

বিডি২৪লাইভে/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: