দেশের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
একের পর এক অস্ত্র ধরা পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার বিমানবন্দরগুলোর ব্যবস্থাপককে ঢাকায় ডেকে এনে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদিন সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘোষণা ছাড়া কোনো যাত্রী অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়- ভিভিআইপিসহ সব যাত্রীকে তল্লাশি করে আর্চওয়ের মাধ্যমে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া যেসব অস্ত্র ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে সোমবার বিমানে ওঠার আগে ঘোষণা ছাড়াই অস্ত্র নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের অভিযোগে যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ হোসেনকে আটক করেছে এভিয়েশন নিরাপত্তা সংস্থা এভসেক।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে ফ্লাইট থেকে অফলোড করে সন্ধ্যায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার আবদুল্লাহ আল ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ঘোষণা না দিয়ে তার বৈধ অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন। হ্যাভি লাগেজ গেটের স্ক্যানারে অস্ত্রটি শনাক্ত হয়।
লাগেজ গেট পার হওয়ার পরই মেহেদী হোসেনের কাছে তার ব্যাগে অস্ত্র আছে কিনা- জানতে চায় নিরাপত্তাকর্মীরা। এ সময় মেহেদী বলেন, অস্ত্র আছে। সেটি তার বৈধ অস্ত্র। তিনি অস্ত্রটি সম্পর্কে ঘোষণা দিতে চান। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, এখন আর ঘোষণা দেয়ার কোনো ধরনের সুযোগ নেই।
আর্চওয়ে পার হওয়ার আগেই গেটে এ ঘোষণা দেয়ার দরকার ছিল। ঘোষণা না দেয়ায় আপনাকে আটক করা হল। এরপর তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে একের পর এক অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশের ঘটনা কেন্দ্র করে পুরো বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। এখন থেকে ঘোষণা ছাড়া কারও কাছ থেকে অস্ত্র বা এক্সপ্লোসিভ পাওয়া গেলেই তাকে আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ কারণে এখন সব যাত্রীকেই তল্লাশি করা হচ্ছে আপাদমস্তক। এতে প্রায় সময়ই বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে ভিড় জমে যাচ্ছে। এখন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেটের কাছে পৌঁছেই ঘোষণা দিচ্ছেন তার কাছে বৈধ অস্ত্র আছে।
তবে কিছু প্রভাবশালী ভিআইপি এ ধরনের তল্লাশিতে নাখোশ বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় এক প্রভাবশালী মন্ত্রী চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছান।
হেভি লাগেজ গেট দিয়ে প্রবেশের সময় তাকে তল্লাশি করতে যান একজন নিরাপত্তাকর্মী। এতে তিনি চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেন, আমি কি সন্ত্রাসী, আমি কি সিকিউরিটি থ্রেট? এতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়।
শেষ পর্যন্ত তিনি বিনা তল্লাশিতেই পেরিয়ে যান সব কটা গেট। এমনকি এন্ট্রি হাইজ্যাক পয়েন্টেও তাকে কেউ তল্লাশি করার সাহস পায়নি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
সাধারণ যাত্রীরা আইন মানতে বাধ্য, অপরদিকে ভিআইপিরা মানবে না, এমন দ্বৈতনীতি কেন- জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা আপনাদের বিবেক খাটিয়ে লিখেন।’
সূত্র আরও জানায়, সোমবার সিভিল এভিয়েশনের সদর দফতরের কনফারেন্স রুমে দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠক হয় বিমানবন্দরের ম্যানেজারদের সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। বৈঠকে প্রত্যেক ম্যানেজারের কাছ থেকে নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান।
এ সময় কয়েকজন ম্যানেজার বিমানবন্দরের সীমানা দেয়াল, জনবলের অভাব ও যন্ত্রপাতি অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরেন। চেয়ারম্যান অবিলম্বে এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার ঘোষণা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শাহজালাল অভ্যন্তরীণ বিমান টার্মিনাল পেরিয়েছেন অন্তত ৭ জন যাত্রী।
জানা গেছে, সোমবার বিকালে যশোর যাওয়ার জন্য মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিমানবন্দরে হাজির হয়ে সঙ্গে থাকা একটি পিস্তল সম্পর্কে কোনো ধরনের ঘোষণা না দিয়েই চলে যান গেট পেরিয়ে।
এ সময় স্ক্যানার মেশিনে তার ব্যাগেজে অস্ত্র ভেসে উঠলে তাকে নিরাপত্তাকর্মীরা ডেকে আনেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে চৌগাছা ফুলছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেন।
তখন জানতে চাওয়া হয়, ব্যাগের পিস্তল সম্পর্কে ঘোষণা দেননি কেন। এ ঘটনায় তাকে আটক করা হবে বলেও তাৎক্ষণিক জানানো হয়। এরপর তিনি টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির করতে থাকেন।
তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় তিনি ‘সরি’ বলে বারবার দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা এভসেকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ ডেকে আনেন এবং বিমানবন্দর থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেয়ার পর গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মূল প্রবেশমুখেই প্রচণ্ড ভিড়। প্রতিটি যাত্রীর দেহ ও লাগেজ ব্যাগেজ তল্লাশি করা হয় ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। দুহাত উঠিয়ে গলা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত তল্লাশি করতে দেখা যায়।
স্ক্যানার মেশিনেও লাগেজ-ব্যাগেজ পরীক্ষা করা হয়। আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো শব্দ হলে ওই যাত্রীকে বারবার তল্লাশি করা হয়। এতে বেশি সময় লাগায় সকালে ও বিকালে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়।
নিরাপত্তার এমন ব্যবস্থাপনা বেশির ভাগ যাত্রী মেনে নিলেও কিছু কিছু যাত্রী তাতে অধৈর্য হয়ে পড়েন। সকাল দশটার দিকে একজন যাত্রী এ ধরনের নিরাপত্তা বিড়ম্বনায় অসহ্য হয়ে তার এক নিকটাত্মীয় মন্ত্রীকে ফোন করেন।
সেই মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সিভিল এভিয়েশনে ফোন করে জানতে চান- এয়ারপোর্টে কেন এত ভিড়। ভিড় তাড়াতাড়ি কমানোর কথাও বলেন। এ ধরনের ফোনে বিপাকে পড়েন বলেও সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে চট্টগ্রামগামী এক যাত্রীকে পায়ের মোজা খুলতে বললে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন। চিৎকার করে বলেন, আমি কি সন্ত্রাসী? আমাকে কেন মোজা খুলতে হবে।
জবাবে সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, নিরাপত্তা আইন সবাইকে মানতে হবে। এতে কিছুটা বিড়ম্বনা বা বিলম্ব হলেও দেশের স্বার্থে তা মানতে হবে। তারা বলেন, হিথরো, জেএফকে ও দুবাই এয়ারপোর্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না, শুধু সমস্যা হয় ঢাকায়। বিদেশের বিমানবন্দরে কেউ কোনো টুঁ শব্দ করার সাহস পান না। এখানে জুতো খুলতে বললে অনেকেই নানান প্রশ্ন করেন।
এদিকে সোমবার ৭ জন যাত্রী যথারীতি সব নিয়ম-কানুন মেনে ঘোষণা দিয়েই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন। তারা এ ধরনের তল্লাশিকে স্বাগত জানালেও বিরক্তবোধ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। এভসেক সূত্র জানিয়েছে, শতভাগ তল্লাশিতে বেশির ভাগ যাত্রী মেনে নিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হয়। রোববার সন্ধ্যায় একজন ভিআইপিকে দেহ তল্লাশি করতে চাইলে তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সূত্র: যুগান্তর।
বিডি২৪লাইভ/এআইআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: