প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডার প্রশংসা করলেন এরদোগান

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম

নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চে আল-নুরসহ দু’টি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পর্যায়ে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য দেশটির সরকার ও প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের প্রশংসা করেছেন ওআইসির চেয়ারম্যান রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলায় ৫০ জন মুসল্লি নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ইস্তাম্বুলে শুক্রবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (২২ মার্চ) তুরুস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসি আয়োজিত বৈঠকে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর ভুয়সী প্রসংশা করেন এরদোগান।

ওই বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী সময়গুলোতে মুসলমানের প্রতি যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। তা সব দেশের নেতাদের আদর্শ হওয়া উচিত।

এরদোগান আরও বলেন, সব ধরনের মানবতা ও ইসলামিক জগতের ভবিষ্যৎকে হুমকি দেয় এমন ঘটনাগুলোর প্রতি উদাসীন হতে পারে না ওআইসি। তাই সবার উচিত ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

তিনি তার বক্তৃতায় গোলান মালভূমির ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ইচ্ছার ব্যাপারে কড়া সমালোচনা করেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। অভিবাসী ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা থেকেই তিনি ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছেন। হামলার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রদান করা হবে। আপাতত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে থাকছে সে।

ব্রেন্টনের ওই হামলার পর দেশের মানুষ মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার কোনোপ্রকার রাখঢাক ছাড়াই মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে বারবার করে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, মুসলিম নারীদের সাহস জুগিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য। তিনি নিজে মুসলমানদের মতো করে হিজাব পরেছেন, পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, এমনকি পার্লামেন্টে নামাজেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

ওই ঘটনার পর ওআইসির পক্ষ থেকে বিশেষ জরুরি বৈঠকের ডাক দেয়া হয়েছিল। এতে এরদোগান বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একজন অস্ট্রেলীয় সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছে ৫০ জন মুসলমান। ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামের ওই হামলাকারী তাদের হামলার ভয়াবহতা বুঝাতে হামলার সেই ঘটনা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছেড়ে দিয়েছিল। সব মিলিয়ে পুরো বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই সপ্তাহ পুরো বিশ্ব দেখেছে, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের কাছে শেখার রয়েছে, কিভাবে সন্ত্রাস, ভয়াবহতাকে জবাব দিতে হয়। কিভাবে ওই ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে হয়। আজ শুক্রবার প্রকাশিত নিউ্ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এখন জেসিন্ডা আরডার্নের মত একজন নেতা প্রয়োজন।

শুক্রবারের হামলার প্রায় সাথে সাথেই তিনি এ ব্যাপারে বক্তব্য দেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিক্ষুব্ধ লোকজনের কথা শোনেন। ওই সময় তিনি কথা দেন এ হামলায় ট্যারেন্ট যে সব বন্দুক ব্যবহার করেছে, তিনি সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।

তিনি তার কথা রেখেছেন। সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার তিনি এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে আইন পাস করেছেন। তিনি বলেন, মিলিটারি ধাচের সেমি অটোমেটিক এবং অটোমেটিক অস্ত্র এখন থেকে নিষিদ্ধ করা হলো। সেই সাথে এসব অস্ত্রের সহযোগী যেসব যন্ত্রাংশ সেগুলোও তিনি নিষিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার সাথে এই আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য।

এ সপ্তাহের শুরুতে পার্লামেন্টে জেসিন্ডা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বিষয় হিংসা ও সহিংতা ছড়ায় সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। তিনি এখনই ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য বিষয়গুলোকে সীমিত করে দেননি বা বাক স্বাধীনতার ব্যাপারে কোনো বাধা দেসনি। কিন্তু জেসিন্ডা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এ মাধ্যমগুলো বন্দুক তৈরি ও অস্ত্র সরবরাহকারীদের মতোই।

জেসিন্ডা ওই অস্ত্রের ব্যাপারে জানিয়েছেন, আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি কমিটি এ ব্যাপারে দেখাশোনা করবে। নতুন করা ওই আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, একটি স্কিমের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে থাকা অস্ত্রগুলোও ফেরত আনা হবে, এক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। এবং যারা এ সময়ের মধ্যে অস্ত্রগুলো ফেরত দেবে না তাদেরকে জেল-জরিমানার মুখে পড়তে হবে।

তার এমন দৃঢ় পদক্ষেপের পর পুরো বিশ্বের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্ণবাদের নিন্দা করা উচিত। ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখ ভাগ করে নেয়া উচিত এবং অস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিহিংসার পথও বন্ধ করে দেয়া উচিত। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন সে পথটিই দেখিয়ে গেছেন। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

বিডি২৪লাইভ/এসএএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: