রাস্তায় ঝাঁঝালো গন্ধ, খেত-খামারে পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ!

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১১:০০ পিএম

মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ ক্ষেত। রাস্তায় পেঁয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধ। বাড়িগুলোতে বসার উপায় নেই, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে পেঁয়াজ। রাতে ঘুমানোর মতো সামান্য জায়গা রেখে বাড়ির সবটুকু জায়গায় রাখা হয়েছে এই পেঁয়াজ। এখনও ক্ষেতে রয়েছে পেঁয়াজ, যা কৃষক উঠিয়ে বাড়িতে আনছেন। স্তুপ করে রাখছেন বিক্রির অপেক্ষায়। এই অবস্থা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের।

স্থানীয়রা বলছেন, গোটা শৈলকুপা উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় এই সাধুহাটি গ্রামে। নানা জাতের পেঁয়াজের চাষ হয় তাদের গ্রামটিতে। কৃষকদের ভাষায় এই চাষটি লাভজনক হওয়ায় তাদের আগ্রহ বেড়েছে, প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পেঁয়াজ চাষ।

কৃষি বিভাগের একটি সূত্রে জানিয়েছেন, শৈলকুপা উপজেলায় মোট চাষযোগ্য জমি আছে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। তার মধ্যে এ বছর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৬১৫৫ হেক্টর জমিতে। আর শুধু সাধুহাটি গ্রামেই পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যা ওই গ্রামের মোট চাষযোগ্য জমির অর্ধেক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনোজ কুমার বিশ্বাস।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সনজয় কুমার কুন্ডু জানান, তার উপজেলাতে দিনের পর দিন পেঁয়াজের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময়ের এই এলাকায় ধান চাষের প্রাধান্য ছিলো। এখন সেখানে পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। গত ১০ বছরে এই চাষ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিং সহ বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে। এ বছর বেশ কিছু কৃষক সুখসাগর জাতটিও চাষ করেছে। গোটা উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা তাদের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ উঠিয়ে ঘরে আনতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজের মূল্য কিছুটা কম। উৎপাদন বেশি হওয়ায় তারপরও কৃষক পেঁয়াজ চাষে লাভবান হবেন বলে আশা ওই কর্মকর্তার।

সরেজমিনে শৈলকুপা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত। যেখানে কাজ করছেন কৃষকরা। কেউ পেঁয়াজ তুলছেন, কেউ বস্তা ভরছেন। আবার কেউ বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। 

উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের কৃষক সমশের আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির বাইরে মেয়েরা পেঁয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। ঘর-বারান্দা কোথাও একটু খালি জায়গা নেই। রাতে শোবার জন্য ঘরে যে খাটটি রয়েছে, তার নিচেও পেঁয়াজ!

সমশের আলী জানান, এ বছর তিনি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৬ বিঘা করেছেন লাল তীর জাত, বাকিটা সুখসাগর জাত। যার মধ্যে অর্ধেক পরিমান জমির পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। এখনও মাঠে পেঁয়াজ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এক বিঘায় ১ শত মন পেঁয়াজ পাচ্ছেন। যা বিক্রি করে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা হবে। এই চাষে ক্ষেতের ফসল ভালো হওয়ায় খুশি তিনি।

ওই গ্রামের আরেক কৃষক শাহিনুর রহমান জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। মাঠ থেকে পেঁয়াজ উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত তিনি। এই ক্ষেত থেকে তিনি ৩ শত মন পেঁয়াজ পাবেন আশা করছেন। যা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা পাবেন। এই চাষ করতে তার ৫০ হাজারের কিছু বেশি খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের এলাকায় পেঁয়াজের চাষ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিটি কৃষকের এই চাষ রয়েছে।

উপজেলার বাখরবা গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, এই পেঁয়াজ কাটার পর তারা পাট চাষ করবেন। পাট কেটে ধান করবেন। বছরে তিনটি ফসল পাচ্ছেন তারা। যে কারণে পেঁয়াজের চাষটি দ্রুত প্রসার ঘটছে।

তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে এই উপজেলাতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই তারা অনেক সময় সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

&dquote;&dquote;সাধুহাটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনোজ কুমার বিশ্বাস জানান, তার এই ব্লকে ৭ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি আছে। আর ১৫৬০ টি কৃষি পরিবার রয়েছে। এ বছর সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। প্রায় সকল পরিবারের রয়েছে পেঁয়াজের চাষ। এই চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোজ কুমার কুন্ডু জানান, উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ ক্রমেই বাড়ছে। কৃষকরাও এই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তবে এখানে একটি কোল্ড স্টোর প্রতিষ্ঠা জরুরী। তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পেতেন। অনেক সময় সংরক্ষণ করতে না পেরে অল্প টাকায় তারা উৎপাদিত কৃষি পন্য বিক্রি করতে বাধ্য হন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: