বাকশালের ফরম জিয়া ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন: মেজর হাফিজ

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০১৯, ০১:১১ পিএম

১৯৭৫ সালে বাকশালের ফরম পূরণ করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের কাছে বাকশালের ফরম এলে তিনি তা ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে (ময়লার ঝুড়ি) ফেলে দেন বলে জানিয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়াউর রহমানের তৎকালীন একান্ত সচিব মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, হানিফের এমন বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি।

সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। 

হাফিজ বলেন, বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) যখন গঠন করা হয়, তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরে আমি তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব ছিলাম। একদিন সকাল ১০টায় জেনারেল জিয়া আমাকে বললেন, দেখো তো হাফিজ, আমার কাছে একটা ফরম পাঠিয়েছে। আমি দেখলাম, এটা বাকশালে যোগদানের ফরম। উনি বললেন, তোমার কী মত? তখন আমি বললাম, স্যার এই ব্যবস্থা টিকবে না, আপনি এটাতে যোগ দেবেন না। উনি আমার দিকে তাকালেন। এর পর উনি বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ, ফরমটা নিয়ে উনি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটের মধ্যে ফেলে দিলেন।

হানিফের এমন বক্তব্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, ‘আমি এ ঘটনার জীবন্ত সাক্ষী। আমি বলছি- যদি জিয়াউর রহমান বাকশালে যোগ দিয়ে থাকেন, প্রমাণ দেখান। ফরম ফিলআপ করে থাকলে, দেখান- উই আর সি। মিথ্যাচার করে দেশটাকে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের সমালোচনা করে বিএনপির এই অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশে নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের করদ রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

এদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এছা্ড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায়চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, মহানগর বিএনপি নেতা কাজী আবুল বাশার, আহসানুল্লাহ হাসান, সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুবদলের মামুন হাসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুল আউয়াল খান, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সেলিম রেজা হাবিব, নবী উল্লাহ নবী, মো. মোহন, মোরতাজুল করীম বাদরু, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের যে চেতনা, যে আদর্শ সামনে নিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ আজ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতা মানে শুধু একটি পতাকা নয়, ভূখণ্ডও নয়। স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে- এই ভূখণ্ডে যারা বাস করে তাদের স্বাধীনতা। তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মুক্তির স্বাধীনতা, যা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।

তিনি আরে বলেন, বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজ ৪৮ বছর পর ঠিক একইভাবে তারা নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ছদ্মবেশে একটা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। আজ সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন হয়েছে, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি শুধু আমাদের দলের নেতা নন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের নেতা। যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। যিনি সারাজীবন এই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই নেতা এখন পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে। প্রতিদিন তার শরীর খারাপ হচ্ছে। তাকে মুক্ত করলেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে।

বিডি২৪লাইভ/এসএএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: