শিশুটি শিখালো আগুন লাগলে দায়িত্ববোধ কি!

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৮:১৯ পিএম

বনানীতে গতকাল দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ এর কাছাকাছি। আহত সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে দেশসহ আন্তর্জাতিক মহলে। আর জনসাধারণের উৎসুক ভীড়ের কারনে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হওয়ায় পুরো দেশসহ আন্তর্জাতিক মহলেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিদেশীরাও সংবাদের বিভিন্ন কমেন্টসে বনানীর ঘটনায় উৎসুক জনতাকে ভৎসনা করেছে।

গতকাল অসুস্থ শরীরে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি আমার মনে নাড়া দিয়েছে। যে ছবিতে দেখতে পেলাম এক পথ শিশু ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ছিদ্রের উপর বসে তাদের সহায়তা করতে। এই ছবি মনের মধ্যে গেথে রাখার মত ছবি, ফেসবুকের টাইমলাইন, কভারে রাখার মত ছবি ও আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনীতে এই ছবি পাঠানোর জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি।

এই শিশুটি আমাদের শিক্ষিত সমাজকে দেখিয়ে দিলো পড়াশোনা জানলেই সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায় না। সবাই যেখানে ছবি তুলা নিয়ে ব্যাস্ততা দেখিয়েছে, সব বাহিনীকে ঢুকতে বিরম্বনায় ফেলেছে। সেখানে শিশুটি শিখালো এমন পরিস্থিতিতে করনীয় কি! গতকাল ফায়ার সার্ভিসের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পাঠানো সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ সেচ্ছাসেবকদের ঢুকতে পথ রোধ করা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতা কি শিখতে পারবে ছোট শিশুটি থেকে?

চকবাজারের আগুনের ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বুঝিয়েছিলেন, এমন পরিস্থিতিতে রাস্তা খালি করে দিতে! যেন সব বাহিনী দ্রুত প্রবেশ করতে পারে, উদ্ধার করতে পারে বিপদগামী মানুষগুলোকে। এতো বার বুঝানোর পরেও এতো ভুল কি করে করি আমরা! আমার দেশের ফায়ার সার্ভিসসহ সকল বাহিনীকে অনেকে ই বলছেন, তেইশ তলা পর্যন্ত পৌছাতে পারে না! আমি তাদের বলতে চাই আপনাদের মত উৎসুক মানুষ যেখানে ভীড় করে সমস্যা তৈরি করে সেখানে সমস্যা বাড়বে ই। যদি গতকাল আগুন লাগার পর দলবদ্ধ হয়ে আশপাশের মসজিদসহ হোটেল গুলো থেকে পানি এনে পাশে দাঁড়াতেন তাহলে হতাহতের পরিমাণ এতো বাড়ার কথা ছিলও না।

আমি গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশন গিয়েও উদ্ধার কাজে হাত বাড়িয়েছি সেনাবাহিনী সহ সব বাহিনীর সদস্যদের সাথে। আমি সেই ছেলে যে কিনা হেড অব নিউজকে তাজরীন ফ্যাশন, রানা প্লাজা থেকে বলেছিলাম, স্যার আমার পক্ষে সম্ভব না রিপোর্ট করা। সেই আমি তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড থেকে দুজন ও রানা প্লাজা থেকে সতেরো জনকে জীবিত উদ্ধার করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রশংসা পেয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে রিপোর্ট করনীয় থেকেও বরং নিজ প্রচেষ্টায় যদি দুই একজনের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয় কিংবা জনস্রোতকে সরিয়ে সব বাহিনীকে উদ্ধার করতে সহায়তা করা যায়! আমি মনে করি এতেই দেশের কল্যাণ সাধিত হবে। স্যালুট জানাচ্ছি, সেই নাম না জানা শিশুটিকে যে ফায়ার সার্ভিসের ছিদ্র পাইপের উপর বসে সহায়তা দিয়ে জানান দিয়েছে এই দেশে মানবতা মরেনি।

লেখক:
আরিফ রহমান শিবলী
দক্ষিন এশিয়ার শিশু গণমাধ্যম প্রধান ও সিইও, কিডস মিডিয়া

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: