‘আমি পঙ্গু মানুষ, আমাকে কেউ একটু বাঁচান’

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৯, ১০:১৮ এএম

সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি তো বের হতে পারছি না। পঙ্গু আমি, উপায় না পেয়ে চেয়ারে বসে আছি। আমার জন্য দোয়া করিস। তোরা ভালো থাকিস। ছোটো ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশের সঙ্গে এসব কথা বলছিলেন বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো মঞ্জুর হাসান। তার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে। তিনি মুনছুর রহমানের ছেলে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুর হাসান ছাত্রজীবন (১৯৮৭-৮৮ সাল) থেকে ঢাকায় থাকতেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করে ছাত্রজীবন শেষে চাকরি শুরু করেন। এরপর সংসার। পরিবার নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে বসবাস শুরু করেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন মঞ্জুর হাসান ভবনের ২১ তলায় কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। আগুন থেকে বাঁচতে সবাই যখন ছোটাছুটি করছিলেন তিনি কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসেছিলেন। আর জীবনের শেষ সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এক সময় ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।

শুক্রবার সকালে নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের লোকজন মঞ্জুর হাসানের বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। নিহতের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। তবে তার ছোট ভাই মোনাক হাসান ওরফে শিমুল নওগাঁ মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির বগুড়া ব্রাঞ্চ অফিসে চাকরি করেন। সেখান থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা জানতে পান তিনি। বাড়িতে কান্না করার মতো কেউ নাই। শুধু গ্রামের লোকজন মঞ্জুরের মরদেহ দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।

নিহতের ছোট ভাই মোনাক হাসান ওরফে শিমুল বলেন, ভাই চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে কাশেম গ্রুপের মতিঝিল অফিসের সামনের রাস্তায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হন। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। এক প্রকার পঙ্গু জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তারপরও কোম্পানি ভাইকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি। পরবর্তীতে তাকে বনানীর হেড অফিসে রেখে দিয়েছিলেন। অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছুটোছুটি করছিল। কিন্তু ভাই পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই মোবাইল ফোনে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিল। আর দোয়া চেয়েছিল। তার শেষ কথা ছিল ‘আমি তো বের হতে পারছি না- এখানে হয়ত আমার শেষ সময় যাবে।’ এক সময় তার ফোনের সংযোগ কেটে যায়। এরপর ফোনে রিং হলেও রিসিভ হয়নি।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: