স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠে সাইফুরকে হত্যা করেন রুপা!

প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০০ এএম

সিলেট মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯) হত্যার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

প্রেম সংক্রান্ত জটিলতাতেই সাইফুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। এ ঘটনায় সাইফুরের ছাত্রী নিশাত তাসনিম রুপা (২০) ও তার প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেনকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর সোমবার (০১ মার্চ) দুপুরে সিলেট মহানগর ৩য় আদালতের হাকিম সাইফুর রহমানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নিশাত তাসনিম রুপা। একই আদালতে জবানবন্দি দেন রুপার কথিত প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেনও।

জবানবন্দিতে রুপা জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাদের বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে লজিং থাকতেন সাইফুর রহমান। এক সময় রুপার প্রতি তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। পরে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তাকে চলে যেতে বলেন। লজিং থেকে চলে এসে মেসে ওঠেন সাইফুর। ২০১৭ সালে কলেজের সহপাঠী মুজাম্মিল হোসেনের সাথে রুপার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাইফুর। অতীতের ন্যায় মেলামেশা করতে চাপ দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রুপা। একাধিকবার মেলামেশা করা, মেলামেশার সময় ধারণকৃত ভিডিও, স্থির চিত্র ও মিথ্যা কাবিননামা প্রকাশের কারণে রুপা ও তার প্রেমিক মুজাম্মিল প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করেন।

জবানবন্দিতে বলা হয়, সাইফুরের সাথে দেখা করতে গত ৩০ মার্চ শনিবার সকাল ৮ টার পরে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যান রুপা। এ সময় ঘুমের ঔষধ ও বিষ মেশানো সেমাই খেতে দেয়া হয় সাইফুরকে। রুপার দেয়া সেমাই খাওয়ার পর দু’জন সোবহানীঘাটের হোটেল মেহেরপুরে যান। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের ২০৬ নং কক্ষে ওঠেন। কক্ষে ওঠার সামান্য পর কিছুটা অজ্ঞান হয়ে পড়েন সাইফুর। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের ভ্যানেটি ব্যাগে রাখা রশি বের করে সাইফুরের গলায় প্যাঁচিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। সাইফুরের মৃত্যু নিশ্চিতের পর ফোন দেন প্রেমিক মুজাম্মিলকে। মুজাম্মিল সিএনজি অটোরিক্সা রিজার্ভ করে হোটেলে ছুটে আসেন। হোটেলের কক্ষ থেকে রুপাকে নিয়ে এসে হোটেল ম্যানেজারকে জানান, তাদের স্বজন অজ্ঞান হয়েছেন, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে সাইফুরকে ধরাধরি করে সিএনজি অটোরিক্সায় তুলে সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস এলাকার দক্ষিণ সুরমার লতিপুরে তারা ফেলে দেয়।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানান, এ সকল তথ্য ছাড়াও আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে রুপা ও মুজাম্মিল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। রুপা সিলেট সদর উপজেলার শাহপরান (রহ.) থানার ক্ষিদিরপুর দত্তগ্রামের (সুরমা গেইট) শফিকুর রহমানের কন্যা ও মুজাম্মিল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আলমপুরের নজির আলীর পুত্র। রুপা এমসি কলেজের অনার্স (ইসলামের ইতিহাস) ২য় বর্ষ ও মুজাম্মিল একই বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী।

পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধারের পর গত রোববার বিকেলে টিলাগড় থেকে মুজাম্মিল ও দত্তগ্রাম ক্ষিদিরপুর থেকে রুপাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রভাষক সাইফুর রহমান হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে পুরো হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। গ্রেপ্তারকৃত দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে গতকাল সোমবার দুপুরে তাদেরকে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই শিপলু চৌধুরী এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

গত রোববার সকাল ১০টায় দক্ষিণ সুরমার লতিপুর থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে প্রভাষক সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। পরে তার পরিচয় উদঘাটন হয়। নিহত সাইফুর রহমান গোয়াইনঘাট উপজেলার ফুলতৈলছ গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র। এমসি কলেজের সাবেক মেধাবী ছাত্র ও রোভার স্কাউট দলের দলনেতা সাইফুর রহমান মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এবং গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের মা রনিফা খাতুন বাদি হয়ে গতকাল সোমবার দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১। ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি।

এদিকে কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে ও ঘাতকদের শাস্তির দাবিতে মদন মোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিভিন্ন সময়ে সাইফুরের ধারণকৃত ভিডিও, স্থির ছবি, মিথ্যে কাবিননামা প্রকাশ সহ তার (রুপা) পরিবারের সদস্যদের হুমকি প্রদানের কারণে সে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে। এর অংশ হিসাবে গত ৩০ মার্চ সকাল ৮টা হতে সাড়ে ৮টার মধ্যে সে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে সাইফুরের সাথে দেখা করে। তাকে বিষ ও ঘুমের ঔষধ মেশানো সেমাই খাওয়ানোর পর পরিকল্পনামাফিক তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন-সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বড় সাফল্য।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: