ফেসবুকে বিদেশির ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়ালেন তাহমিনা!

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩১ এএম

বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের সাথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ফেসবুক। শুধু বন্ধু-বান্ধবই নয়, এর বাইরেও আমরা অজানা-অচেনা মানুষদের সাথে কথা বলি, নতুন সম্পর্ক তৈরি করি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে কত প্রতারক ফাঁদ পেতে রয়েছে আমাদের সর্বস্ব শেষ করে দেয়ার জন্য? তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর কাফরুলের তাহমিনা পারভীনের সাথে।

তাহমিনা পারভীন। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। কিছুদিন আগে তাহমিনার ফেসবুক আইডিতে উইলিয়াম ডেভিড নামের একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। কৌতুহল বশত সেই রিকোয়েস্টটি গ্রহণ করেন তাহমিনা।

এরপর মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। একসময় তাহমিনার কাছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চায় উইলিয়াম ডেভিড। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত কথাবার্তা চলত দু’জনের।

এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর উইলিয়ামের সাথে বেশ ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে তাহমিনার। একদিন উপহার পাঠানোর জন্য তাহমিনার কাছে তার বাসায় ঠিকানা চায় উইলিয়াম। পরে তাহমিনা তার বাসার ঠিকানা উইলিয়ামকে দেন।

এর কয়েকদিন পর তাহমিনার কাছে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই বেন কার্লোস নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে ডেল্টা কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন বলে পরিচয় দেন।

বেন কার্লোস জানান, উইলিয়াম ডেভিড নামের এক ব্যক্তি ইংল্যান্ড থেকে একটি পার্সেল পাঠিয়েছে। সেই পার্সেলটি পাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের কাস্টমস অথরিটি ৪৫ হাজার টাকা দাবি করছেন। টাকা পরিশোধ করলেই সেই পার্সেলটি পাওয়া যাবে।

তারপর ৪৫ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য মো. সালাহ উদ্দিনের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার ব্রাঞ্চের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেন সেই কথিত বেন কার্লোস।

এরপর তাহমিনা ওই অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পেয়ে কার্লোস তখন উপহারটি দিচ্ছি-দেব বলে সময় নেন। এরপর অনেক দিন কেটে যায়।

এর কিছুদিন পরে কার্লোস আবার তাহমিনাকে ফোন করে বলেন, ওই উপহারের প্যাকেটের ভেতরে পাউন্ড আছে যা কাস্টমসের এক সিনিয়র কর্মকর্তার নজরে এসেছে। ক্লিয়ার করতে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।

এ কথা শোনার পর তাহমিনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এত টাকা পাঠানোর জন্য কিছু সময় চাইলে তখন কার্লোস মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হওয়ার ভয়ভীতি দেখান।

মামলার ভয়ে তাহমিনা আবার কার্লোসের দেয়া মো. একরাম মুন্সী নামের আরেক ব্যক্তির ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। তখন কার্লোস তাহমিনাকে জানান, সময় মত উপহারটি পেয়ে যাবেন।

পরের দিন আবার কার্লোস তাহমিনাকে ফোন করে জানান, উপহারের প্যাকেটের ভেতরে বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮০ টাকা থাকায় শতকরা ৩ শতাংশ হারে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩২০ টাকা ট্যাক্স জমা দিতে হবে।

বারবার কেন এত টাকার জটিলতা, এ ব্যাপারে জানতে ওই সময় তাহমিনা কার্লোসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি ব্যস্ততায় রাজি হননি। তখন তাহমিনার আর বোঝার বাকি থাকে না তিনি বিশাল এক ফাঁদে পা দিয়েছেন।

এরপর জানা যায়, প্রতারক ডেভিড নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ফুটবলও খেলেন। খেলাধুলার পাশাপাশি করেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কয়েক বছর আগে এমন অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতেও যান। সেখানেই সখ্যতা গড়ে তোলেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. ইসমাইল হোসেনের (৪৮) সঙ্গে। কিছুদিন পর দু’জনেই জামিনে বের হয়ে আসেন। পরিকল্পনা করে পুনরায় জড়িয়ে পড়েন এমন ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

তবে এবার অপরাধের ধরণ পরিবর্তন করেন তারা। সহজ-সরল নারীদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে ফাঁদে ফেলার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। এরপর এভাবেই তাহমিনাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে নাইজেরিয়ান হেনরি ইশিকা ও মো. ইসমাইল হোসেন আটকের পর বের হয়ে আসে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই প্রতিবেদনটি পিবিআই অফিসার রেজাউল মাসুদের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া তথ্য অবলম্বনে করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: