বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা আত্মসাৎ করল চেয়াম্যান-মেম্বরা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তালম ইউনিয়নের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন। পনের (১৫) বছর আগে স্বামী মারা গেছে। একমাত্র ছেলে বেকার। থাকেন ছোট্ট একটি টিনের ছাপড়ায়। চেয়ারম্যান-মেম্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটি বিধবা কার্ড সংগ্রহ করেন।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-২০১৮ পর্যন্ত সরকারি ভাতা বাবদ ১৮৩০০ টাকা পান। খুশিতে ব্যাংকে গিয়ে কার্ড দিয়ে টাকাও তোলেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে বের হবার পর ইউপি সদস্য হাছিনা বেগম চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা অফিসারসহ বিভিন্ন জনকে টাকা দিতে হবে বলে বই ও সব টাকা জোরপুর্বক ছিনিয়ে নেয়।
তারপর তার হাতে মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বলেন। আর বিষয়টি গোপন রাখার জন্য হুমকি দেয়। প্রকাশ করলে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হবে শাসিয়ে যায়। শুধু মাজেদা খাতুন নয় তার মতো আরও ৭৪ জন কার্ডধারীর কাছ থেকে এভাবে জোরপুর্বক টাকা ও কার্ড নিয়েছে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা।
বিধবা মাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, স্বামী মারা যাবার পর থেকে বহুকষ্টে জীবনযাপন করছি। কয়েক বছর ঘুরে একটি কার্ড পাই। কার্ড দিয়ে টাকা তুলে ব্যাংক থেকে বের হওয়া মাত্র হাসিনা মেম্বর বই ও টাকা জোরপুর্বক কেড়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সমাজসেবা অফিসারের কিছু লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন ফল পাচ্ছি না।
একই ইউনিয়নের পান্ডুরা গ্রামের প্রতিবন্ধী তানিয়ার মা সোহাগী জানান, ব্যাংক থেকে প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য বরাদ্দ ১৪ হাজার ১ শত টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বের হওয়া মাত্র তালেব মেম্বর জোরপুর্বক টাকা নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি দিতে অস্বীকার করার পর জোরজুলুম করে ৬ হাজার আমাকে দিয়ে বাদবাকী ৮ হাজার ১শ টাকা নিয়ে নেয়।
তালম লস্করপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ মঞ্জুয়ারা ও হাড়িসোনা গ্রামের খাদেম আলী জানান, আমরা গরীব। বৃদ্ধ বয়সে একটু ভালভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য সরকার আমাদের ভাতা দেয়। কিন্তু সেই টাকা চেয়ারম্যান-মেম্বর নিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, গরীবের টাকা গরীব খাবে নাকি চেয়ারম্যান-মেম্বররা খাবে-এটা সরকারের কর্মকর্তা ন্যায্যভাবে দেখবেন, তাদের উপর বিচারের ভার দিলাম।
তালম পদ্মাপাড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ নারী জমিনা খাতুন বলেন, কার্ড করতে চেয়ারম্যান আব্বাসউজ্জামান আব্বাস তিন হাজার টাকা নেন। দেড় বছর পর কার্ড পাই। ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার তুলে বের হওয়া মাত্র তালেব মেম্বর চার হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ৫শত টাকা দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেন।
তালম ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নাজির উদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম ও আবু তাহের জানান, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা ব্যাংকে আসার পরই চেয়ারম্যান আব্বাসউজ্জামান আববাস সকল ইউপি সদস্যের ডেকে মিটিং ডাকেন। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেন ব্যাংকে যাবার পর কার্ডধারীদের হাতে কার্ড দেয়া হবে। আর ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর তাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বাদ বাকী টাকা ইউনিয়ন পরিষদে এসে কাছে জমা দিতে হবে। পরে সেগুলো বাটভাটোয়ারা করে নেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউপি মেম্বর তালেব, হাসিনা ও আজিজুলকে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা জোরপুর্বক নিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের হাতে দেয়। পরে চেয়ারম্যান ও কয়েকজন মেম্বর টাকাগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আববাসউজ্জামান আববাস, ইউপি সদস্য তালেব হাসিনা ও আজিজুল ইসলাম টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, প্রতিপক্ষরা তাদের ফাঁসাতে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান জানান, লিখিত অভিযোগ পাবার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহাদৎ হোসেন জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বররা আমাদের অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেয়-এটা সত্য। কিন্তু আমরা এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আর অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে প্রমান হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।
বিডি২৪লাইভ/এজে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: