মাত্র ৩৮ মিনিটেই উত্তরা টু মতিঝিল!

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২৭ পিএম

এগিয়ে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে একের পর এক পিলার আর স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। এতে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের অবয়। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজও চলছে জোরেশোরে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মাত্র ৩৮ মিনিটেই যাওয়া যাবে মতিঝিলে। আর প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে মেট্রোরেল।

‘বাঁচবে সময় বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’-এ স্লোগানে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার এ প্রকল্প অনুমোদন করে। এরপর ২০১৬ সালের ২৬ জুন নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজন্সি (জাইকা)। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার যোগান দিছে সরকার।

এমআরটি-৬ নামে মেট্রোরেলের প্রকল্পটি ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটারের এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ দুই অংশে করা হচ্ছে। একটি অংশ হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও। অপরটি হচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ।

এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেল চালু হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। অন্যদিকে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলছে মেট্রোরেলের কাজ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে মিরপুর, পল্লবী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও এ মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের কারণে হাঁসফাঁস বাড়ছে নগরবাসীর। মূল কাজ শুরুর পর থেকে প্রকল্প এলাকায় সড়কের প্রস্থ কমে গেছে। তাই প্রকল্প এলাকার সড়কগুলোয় তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। তবে খুব শিগগিরই তাদের এ যন্ত্রণার অবসান হতে চলেছে।

অন্যদিকে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজও চলছে জোরেশোরে। ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কের মধ্যখানের সড়ক বিভাজন বরাবর কাজের জায়গা সংরক্ষণ করে দুই পাশে মেট্টোরেলের কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, সম্পূর্ণ এলিভেটেড এবং বিদ্যুৎ চালিত এমআরটি-৬ উভয় পাশের চলাচলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। উত্তরা-মতিঝিল রুটে মোট ১৬টি স্টেশনের প্রতিটিতে ৪৫ সেকেন্ডের জন্য থামবে ১০০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন সবচেয়ে দ্রুতগতির এ ট্রেন।

উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে শুরু করে উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনগুলোতে উঠানামা করতে পারবেন যাত্রীরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের ২৪ সেট মেট্রোরেল ট্রেন নিয়ে শুরু হবে এমআরটি লাইন-৬ এর যাত্রা। প্রতি সেটে প্রাথমিকভাবে ছয়টি করে কোচ থাকবে। পরে আরও দুইটি কোচ যোগ করে প্রতিটি ট্রেনে কোচের সংখ্যা ৮টিতে উন্নীত করা হবে।

তারা জানান, মেট্রোরেলের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার। যাত্রীদের চলাচল ও ব্যবহারের সুবিধায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো হবে এলিভেটেড। দোতলায় থাকবে টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য ব্যবস্থা। ট্রেনে চড়ার প্ল্যাটফরম থাকবে তিনতলায়। প্রত্যেকটি স্টেশনে লিফট, চলন্ত সিঁড়ি, সার্বক্ষণিক ক্লোজসার্কিট টেলিভিশন, ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট সংগ্রহের মেশিনসহ আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।

পরিবেশ বান্ধব মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, থাকবে সুবিন্যস্ত আসন ব্যবস্থা, যাত্রা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংবলিত ডিসপ্লে প্যানেলসহ নানা ব্যবস্থা। নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, প্রতিবন্ধীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরামদায়ক পরিবেশে মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। কোচের ভেতরের তাপমাত্রা হবে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে নিরাপত্তা বেষ্টনী বা ‘প্ল্যাটফরম স্ক্রিন ডোর’ স্থাপন করা হবে। দ্রুতগতিতে চলা ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থাপন করা হবে নিরোধক দেয়াল। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি ট্রেনের কোচগুলোতে থাকবে নির্ধারিত স্থান। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে থাকবে নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সব ব্যবস্থার কারণে মেট্রোরেল হবে আরামদায়ক পরিবহণ ব্যবস্থা। একইসঙ্গে মেট্রোরেল চলাচলে রাজধানীতে যানজট অনেকাংশেই কমে আসবে বলেও ধারণা করছেন তারা।

বিডি২৪লাইভ/এসএইচআর/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: