চট্টগ্রামে মক্কার বলীর ১৪০ তম আসর আজ

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০১ এএম

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মক্কার বলী খেলার ১৪০তম আসর বসেছে আজ (২০ এপ্রিল) শনিবার। সকাল থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে মেলার কার্যক্রম। উপজেলা জুড়ে বলী খেলা ও বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে বাড়তি আনন্দ-উৎসাহ। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বলী খেলা দেখতে উৎসুক জনতা মক্কার বাড়ি এলাকায় ভিড় জমান।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভকে বলেন, এটি সাতকানিয়ার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মেলা ও বলী খেলা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আয়োজক সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রামুর দিদার বলী, উখিয়ার শামসু বলী, টেকনাফের আলম বলী, খুলনার শিপন বলী, যশোরের কামাল বলীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নামকরা বলীরা খেলায় অংশ নেবেন বলে জানা যায়। ১৪০তম বলী খেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক কমিটি। 

মক্কার বলী খেলা এখানকার মানুষের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। বলী খেলা উপলক্ষে তাঁদের বাড়িতে নিকট আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসা অনেকটা নিয়মের মতো। তারা সারা বছরের জন্য ব্যবহৃত বেশির ভাগ জিনিসপত্র মেলা থেকে সংগ্রহ করেন। বলী খেলা উপলক্ষে বসা মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি হরেক রকম সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য খাবার, ফল, কৃষি উপকরণ, বাচ্চাদের খেলনা, ঘর সাজানোর নানা রকম জিনিসসহ যাবতীয় সামগ্রী পাওয়া যায় বলে জানান স্হানীয়রা। 

সাতকানিয়ার মাদার্শা মক্কার বাড়ির বংশধর ড. আবুল আলা মুহাম্মদ হোছামুদ্দিন বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভকে বলেন, এখন থেকে তিন শতাধিক বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষ সৌদি আরবের মক্কার বাসিন্দা ইয়াছিন মক্কী ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সাতকানিয়ায় আসেন এবং মাদার্শার পাহাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু করেন। এর পর থেকে এলাকাটি মক্কা বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। ইয়াছিন মক্কী এলাকায় ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি কিছু ব্যবসাও শুরু করেন।

হজ মৌসুমে তিনি বাংলাদেশের অনেক হাজিকে হজ করানোর জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যেতেন। একসময় তিনি সাতকানিয়ার মাদার্শা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সে সুবাদে সাতকানিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে তিনি বিপুল পরিমাণ জায়গা কিনে নেন। বিয়েও করেছেন বাংলাদেশ থেকে। ইয়াছিন মক্কী এক হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু হাজি নিয়ে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ইয়াছিন মক্কীর পরবর্তী প্রজন্ম জমিদারি প্রথা চালু করে। ১৮৭৯ সালে ইয়াছিন মক্কীর নাতি কাদের বক্স চৌধুরী খাজনা দিতে আসা প্রজা ও এলাকার লোকজনকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম বলী খেলার আয়োজন করেন। এর পর থেকে এটি মক্কার বলী খেলা নামে পরিচিত লাভ করেন।'

মক্কার বলী খেলার মূল আয়োজক নাজমুল আলম চৌধুরী বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভকে বলেন, আমার দাদা মূলত খাজনা দিতে আসা লোকজন ও এলাকার মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বলী খেলার আয়োজন করতেন। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৭ তারিখে সবাই দলবেঁধে খাজনা দিতে আসতেন। ওই দিন মক্কার বাড়ি এলাকায় খাজনা দিতে আসা লোকদের ভিড় জমে যেত। আমার দাদা খাজনা দিতে আসা লোকদের জন্য মেজবানের আয়োজন করতেন। খাজনা প্রদানকারী এবং এলাকার মানুষকে বাড়তি আনন্দ দিতে বলী খেলার আয়োজন করতেন।

শুরুর দিকে বাড়ির সামনে বিশালাকৃতির একটি গাছের টুকরো রাখতেন। খাজনা দিতে আসা এবং স্থানীয় লোকদের মধ্য থেকে যাঁরা ওই গাছের টুকরো আলগা (উপড়ে তুলতে) করতে পারতেন, তাঁরাই কেবল বলী খেলার উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হতেন। পরে তাঁদের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হতো এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দিতেন। গাছের টুকরো আলগা করে প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনকারীরা বলী খেলায় হেরে গেলেও তাঁদের সান্ত্বনা পুরস্কার দিতেন। এভাবে চলতে চলতে মক্কার বলী খেলা একপর্যায়ে এলাকার মানুষের আনন্দের মূল কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: