শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা, তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:০১ পিএম

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৫ বিদেশি নাগরিক। নিহত বিদেশি নাগরিকদের বেশিরভাগই ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক।

এ হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। যারা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তার দেশে যে বোমা হামলায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন, তার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৪ ব্যক্তিকে আটক করেছে। এখন পর্যন্ত আটক আট ব্যক্তির পরিচয় থেকে জানা গেছে তারা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তবে তাদের সঙ্গে বিদেশের কারও যোগাযোগ আছে কি-না এখন সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গোয়েন্দারা দাবি করছেন, কলম্বোর গ্র্যান্ড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ করার ঠিক আগে হোটেলের খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মোহম্মাদ আজম’ নামের এক আততায়ী। ঠিক যে সময় তার পাতে খাবার তুলে দেওয়ার কথা তখনই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয় সে। হোটেলে সে সময় প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই অনেকের প্রাণ যায়। দৌঁড়তে গিয়ে আহতও হন অনেকে।

হোটেলের ম্যানেজার জানিয়েছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খাবারের কাউন্টারের সামনে পর্যন্ত যায় আজম। তারপরই সে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মী সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় হামলাকারী।

প্রায় একই সময় শহরের আরও দু-তিন আমি হোটেলে বিস্ফোরণ হয়। পাশাপাশি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তিনটি গির্জাও। প্রার্থনার জন্য সে সময় প্রচুর মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। কলম্বোর অন্যতম পুরনো গির্জা সেন্ট অ্যান্থনি। সেখানে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গির্জার বেশিরভাগ অংশই ভেঙে গেছে। হামলার পরে এখনও কোনও সংগঠন স্বীকার করেনি।

শ্রীলঙ্কার গির্জায় যে হামলা হতে পারে দিন দশেক আগেই তার ইঙ্গিত পেয়েছিল পুলিশ। সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান। তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে এ কথাই বলেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। পুলিশ প্রধান পি জয়াসুন্দরা ১১ এপ্রিল এই মর্মে পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক বার্তা পাঠান।

ওই সতর্কবার্তায় লেখা হয়েছিল, এনটিজে নামে একটি সংগঠন দেশের বিশিষ্ট গির্জায় হামলার চেষ্টা করছে। ভারতীয় হাই কমিশনও তাদের নজরে আছে।

রোববার (২১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৬টি গির্জা ও শহরের প্রধান দু’টি হোটেলকে লক্ষ্য করে ইস্টার সানডে’র অনুষ্ঠান চলার মধ্যে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. আনিল জাসিংগে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে লাশের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। তবে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলে, সকালে ইস্টার সানডে উপলক্ষে অনেক মানুষের ঢল নামে কলম্বোর গির্জাগুলোতে। এ সময় ৩টি গির্জা একসঙ্গে সিরিজ বোমা হামলা ঘটানো হয়, ওই কলম্বো শহর থেকে কিছু দুরে অবস্থিত আরও কয়েকটি গির্জায় হামলা চালানো হয়। এদিকে শুধু গির্জায় হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি জঙ্গিরা গির্জার পাশে অবস্থিত শহরের প্রধান দু’টি হোটেলেও সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়।

এদিকে ওই ঘটনায় দেশটির বোমা স্কোয়াডের একটি সূত্র জানায়, কলম্বের যে গির্জায় সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তার থেকে ঠিক কয়েক কিলোমিটার দুরে অবস্থিত শহর নিগোম্বোতে আরও একটি গির্জায় একই সময়ে একই কায়দায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে রাজধানী কলম্বোর উত্তরেনেগোম্বো শহরের আরেকটি চার্চে। নিজেদের ফেসবুক পাতায় সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছে ওই চার্চ কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে কুতুয়াপিটায়ে-এর সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চের অভ্যন্তরণে ছিন্নভিন্ন ছাদের ছবি দেখা গেছে। মেঝেতে রক্ত পড়ে থাকার ছবিও দেখা গেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ শ্রীলঙ্কার মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। দেশটির দুই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তামিল ও সিংহলিজ উভয়ের মধ্যেই এই ধর্মাবলম্বীদের দেখতে পাওয়া যায়। এক দশক আগে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দেশটিতে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের মার্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ ও সম্পত্তিতে হামলা শুরু করলে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

এদিকে ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। কলম্বোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। উত্তেজনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দুই দিনের জন্য সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা পাঠানোর অ্যাপস দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে করে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো না যায়।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: