গণহারে ফেল দেয়ার অভিযোগ ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০৮ পিএম

হৃদয় আলম: ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরেও গণহারে ফেল (অকৃতকার্য) দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, অধিভুক্তির পর থেকে সেশনজটসহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই আছে। বার বার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন পরীক্ষায় ঢাকা কলেজের ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জনই নন প্রমোটেড। যাদের অনেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে (এ+) ও পেয়েছেন। ২০১২-১৩ পরীক্ষার রেজাল্ট দিলেও এখনো সিজিপিএ পায় নি অনেকে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভালো পরীক্ষা দিয়ে আসলেও আশানুরূপ ফলাফল আসেনি। উল্টো বিভিন্ন পরীক্ষায় অধিকাংশ পরীক্ষার্থীদের ফেল আসছে। এ নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের।

এ বিষয়ে কয়েজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমরা ভালো পরীক্ষা দিলেও ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে। এমনিতেই সেশনজটে আমাদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন নষ্ট হচ্ছে। তারওপর আবার ফেল আসছে। আমরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।

ইডেন কলেজের কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৬-১৭ সেশনের ইংরেজি বিভাগের ৩০০ জন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে শুধু বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ফেল করার শিক্ষার্থীরা আবার পুনরায় সবার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলে কয়েকজন ছাড়া সবাই পাস করে।

এদিকে, এসব সমস্যার সমাধানে কয়েক দফা দাবি করে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকা কলেজের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালে পরীক্ষার রুটিনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে চোখ হারান তিতুমীর কলেজ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। এরপর কয়েকদফা আন্দোলন হলেও পরিস্থিতির আশানুরুপ উন্নতি হয়নি বলেও দাবি করছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বরাবরই এর জন্য ৭ কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে আসছে। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ বরাবরই আশ্বাস দিয়ে আসলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে এ ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সাত কলেজের ওয়েবসাইট থাকলেও সেখানে সব তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্যের জন্য কলেজে গেলে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে বলে তোমাদের কলেজ জানে। আমরা তাহলে কার কাছে যাবো?

কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী এমদাদুল চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ডিগ্রি পুরাতন সিলেবাসের ২০১২-১৩ সেশনের ৩য় বর্ষের ফলাফলে ভুলে ভরা ও শতকরা ৮০ শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়। এমনিতেই ৩ বছর পিছিয়ে তার পর আবার সেশনজট।

ছালে আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অধিভুক্ত হওয়া আমাদের জন্য শুভকর কিন্তু এমন অশুভ পরিস্থিতি আমরা চাই না। আমাদের সঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেয়া, ভুলে ভরা ফলাফল মোটেও কাম্য নয়। এমনিতে আমাদের শিক্ষা জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তারপর আবার এই অশুভ বার্তা। কর্তৃপক্ষের উচিত অধিভুক্ত কলেজগুলোর ব্যাপারে একটা সুষ্ঠ সমাধান দেয়া। অন্যথায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হয় সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঙ্গে।

এ বিষয়ে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, অভিযোগ করলে অনেক অভিযোগ করা যায়। আমার জানামতে সাত কলেজের কোন সমস্যা নেই। কিছু কিছু ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে। এগুলো আশা করি শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।

পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের লোকসংখ্যা কম হওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা যাদের ফলাফল ভালো হয়েছে তাদের রেজাল্ট দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ৭টি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সাতটি কলেজ হচ্ছে- সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: