সেই অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৭ এএম

ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা জাল সনদে মাদরাসায় নিয়োগ পেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও কোনো ব্যবস্থা নেননি দায়িত্বে থাকা গভনিং বডির সদস্যরা। এতেই শেষ নয়, রয়েছে তার বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগ। 

সূত্রে আরও জানা গেছে, মাদরাসা ফান্ডের অর্থও আত্মসাৎসহ বিভিন্ন সময়ে বোর্ডিংয়ে অনুদান হিসেবে আসা ছাগল বাজারে বিক্রি করে অর্থও হাতিয়ে নিত। ছাত্রদের তহবিলে আসা ভালো চাল বাসায় নিয়ে বাজার থেকে পচা চাল কিনে বোর্ডিংয়ে দিত।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নুসরাত হত্যার তদন্ত গুছিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে নুসরাত হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী শাহাদাত হোসেন শামীমসহ ৮ জন ঘটনার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে রিমান্ড দাখিল করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনেক আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্ত শেষ করে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

তদন্তে থাকা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সিরাজ অভিজ্ঞতার সনদ জাল করে সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পায়। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে কমপক্ষে দশ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অথচ তার সেই অভিজ্ঞতা ছিল না।

সে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রংমালা মাদ্রাসা ও ফেনী সদর উপজেলার দৌলতপুরের ছালামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে সোনাগাজীতে নিয়োগ পায়।

সূত্র আরও জানায়, বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ শুধু নিজেই অভিজ্ঞতার জাল সনদ নেয়নি, অর্থের বিনিময়ে অন্যদেরও সে জাল সনদ দিত।

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, সরেজমিন গিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের অনেক অপকর্মের তথ্য আমরা পেয়েছি। শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।

অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত। এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এদিকে নুসরাত হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জনকে। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আটজনই গ্রেফতার হয়েছে। আর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে চারজন। সবশেষ গতকাল সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিনকেও আটক করা হয়।

বিডি২৪লাইভ/এসএএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: