আদর্শ নাগরিক গড়ার কারিগর প্রফেসর মোশাররফ আলী

প্রকাশিত: ০৩ মে ২০১৯, ০৫:০৫ পিএম

হারুন-অর-রশীদ,
ফরিদপুর থেকে:

একটি সুশিক্ষিত নৈতিকতা সম্পন্ন জাতি গঠনের সুন্দর প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। ঐতিহ্যবাহী ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ কলেজটি। কলেজটির অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর মোশাররফ আলী। মেধা-মননে শিক্ষার আদর্শ নাগরিক গড়ার কারিগর প্রফেসর মোশাররফ আলী।

১৯৬২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার পোড়াগাছা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা: মতিয়ার রহমান, মাতা: ফাতেমা খাতুন। তাঁর স্ত্রী রোজিনা ইয়াসমিন চৌধুরী একজন গৃহিণী।

মোশাররফ আলী নড়িয়া বিহারী লাল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, নড়িয়া কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম (সম্মান), এম.কম (ব্যবস্থাপনা) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনে মোশাররফ আলী বিভিন্ন ধরণের সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। সেখানেও রেখেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই কৃত্তিমান ব্যক্তির শিক্ষা ক্ষেত্রেও রেখে চলেছেন অনন্য অবদান। বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন একুশে সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্তৃক ভাষা সৈনিক ড. আব্দুল মতিন স্মৃতি পদক-২০১৮, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক বঙ্গ বীর ওসমানী স্মৃতি পদক-২০১৮, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ ও ২০১৮ তে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষের খেতাব।

মোশাররফ আলী একই সাথে লেখা-লেখিতেও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর লেখা ‘ঝিনুকের রক্তফেনা ঘুম-২০১৬’ ও ‘তুমি নেই-২০১৮’ কবিতার বই পাঠকমহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

অধ্যক্ষ মোশাররফ আলী এতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সার্বিক বিষয় নিয়ে বিডি২৪লাইভ এর ফরিদপুর প্রতিনিধি হারুন-অর-রশীদকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য নিম্নে সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো....

বিডি২৪লাইভ: সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইছি?

অধ্যক্ষ: সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এ কলেজের অজস্র ধারাবাহিক সাফল্যগাঁথা রয়েছে। আমি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আরও কিছু সময়োপযোগী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে এক যুগেরও বেশি সময় ছাত্র-সংসদ না থাকায় সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান চর্চা, বিতর্ক চর্চা ক্ষেত্রে কিছুটা বন্ধ্যাত্ব নেমে এসেছিল। আধুনিক ফরিদপুরের উন্নয়নের রূপকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমপি মহোদয়ের সহায়তায় পুনরায় ছাত্র-সংসদ চালু হয়েছে। ফলে, শিক্ষা ও সহপাঠ্য ক্রমিক কার্যক্রমে নতুন করে উদ্দীপনা ও গতির সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপন, নিয়মিত ইন-হাউজ আইসিটি ট্রেনিং-এর আয়োজন, বিতর্ক চর্চা, নাট্য চর্চা, সংগীত চর্চা, ক্রিকেট, ফুটবল ও ইনডোর গেমস্-এর নিয়মিত আয়োজন চলছে প্রতি বছর।

এছাড়াও, স্কাউটিং কার্যক্রম, বিএনসিসি কার্যক্রম, রেড-ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেবা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। কলেজে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। বিশটি বিভাগে নিজস্ব সেমিনার লাইব্রেরি ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনন্দিন পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করেছে। জাতীয় দিবসগুলি অত্যন্ত মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে নিয়মিত বিজ্ঞান অলিম্পিয়ার্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশ কিছু বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃত্তি’,‘মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন বৃত্তি’, ‘গোলাম রব্বানী বৃত্তি’, ‘এ.টি.এম. গিয়াস উদ্দিন মেধা বৃত্তি’ ইত্যাদি। দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ধর্ম ও সমাজকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নান্দনিক বিকাশে কলেজ থেকে ‘কল্পলোক’ নামে একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হচ্ছে।

ছাত্র-সংসদের নেতৃত্বে সকল সৃজনশীল কার্যক্রম যথাযথ নিয়মে কার্যকর করা হচ্ছে। দুটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ পরিবহণ সমূহের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পারফরমেন্স র‌্যাংকিং-এ ঢাকা বিভাগের মধ্যে অত্র কলেজ ৭ম অবস্থানে রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ: প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন? শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি কেনো বেছে নিবে?

অধ্যক্ষ: শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফলের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চাল করা হয়েছে। ক্লাশ চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের সকল কার্যক্রম একটি ভিজিল্যান্স টিমের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে তদারক করা হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাঠ্যসূচি যথাযথভাবে অনুশীলন করানো হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক অগ্রগতির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে ক্লাসের সংখ্যা উল্লেখ যোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ল্যাবরেটরীতে সকল প্রকার যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল অবাধলভ্য করা হয়েছে। দক্ষ শিক্ষকের নেতৃত্বে নিয়মিত প্রাকটিক্যাল ক্লাশ পরিচালিত হচ্ছে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত পুরষ্কার বা উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এখানে আইসিটি ও ক্যারিয়ার স্টাডিজের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে এবং নিয়মিত বিতর্ক, বিজ্ঞান চর্চা, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, গণিত অলিম্পিয়াড ও ভাষা প্রতিযোগ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উজ্জীবন তৈরির জন্য থাকে নানাবিধ আয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সুপেয় পানির বন্দোবস্ত রয়েছে এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ: আপনাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব পরিবহণ ও আবাসিক হোস্টেল সুবিধা রয়েছে কি?

অধ্যক্ষ: হ্যাঁ। দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের পরিবহণ সুবিধার জন্য কলেজে ৬টি বাস রয়েছে এবং সেগুলি রুটিন মাফিক শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়া করে থাকে। পরিবহণ ব্যবস্থা দেখভাল করার জন্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম কাজ করছে। ছাত্রদের জন্য রয়েছে ৫টি ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৩টি হোস্টেল। হোস্টেলের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য একটি চৌকষ হোস্টেল কমিটি কাজ করে থাকে।

বিডি২৪লাইভ: শিক্ষার্থীদের মানসিক চারিত্রিক বিকাশের জন্য প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু বলবেন কি?

অধ্যক্ষ: কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সুসংহত করার জন্য নিয়মিত প্রেষণামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, মাদক বিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হয়, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে নানাবিধ সেবাধর্মী অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়। এখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়। কলেজে সম্প্রতি বহুতল বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। রয়েছে একটি মন্দির। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য উদাহরণ হতে পারে এ কলেজটি।

বিডি২৪লাইভ: বর্তমান সময়ে স্লোগান হচ্ছে ‘তরুণরাই গড়বে ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সরকারের এই প্রত্যাশা পূরণে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কেমন ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ: তারুণ্য নিঃসন্দেহে একটি জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি। তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এ কলেজে নানাবিধ আয়োজন রয়েছে। কলেজটিতে ওয়াই-ফাই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা আইসিটি-তে প্রশিক্ষিত হচ্ছে দক্ষ শিক্ষকদের দিকনির্দেশনায়। চমৎকার একটি আইসিটি ল্যাব স্থাপণ করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিতে তরুণদের উৎসাহিত করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত ইন-হাউজ ট্রেনিং-এর মাধ্যমে শিক্ষকদেরকে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান প্রক্রিয়া চলছে।

বিডি২৪লাইভ: মেধাবী ও সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কি কি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে?

অধ্যক্ষ: মেধাবী ও সুবিধা-বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজকল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়ে থাকে। হোস্টেলে তাদের আসন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। নানাবিধ উপবৃত্তির মাধ্যমে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হয়।

বিডি২৪লাইভ: একজন আদর্শ ও দায়িত্ববান অধ্যক্ষ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নের জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

অধ্যক্ষ: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো, শিক্ষকের অতিরিক্ত পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়াস চালানো, প্রযুক্তিগত শিক্ষার পরিসর বৃদ্ধি করা, একটি ই-লাইব্রেরি গঠন করা, বিজ্ঞান ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, সাহিত্য বিষয়ক ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ল্যাব গঠন করা, একাডেমিক কার্যক্রমকে সম্পূর্ণরূপে যুগোপযোগী করা, নিয়মিত সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা। ইতোমধ্যে আমি এ সকল বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কলেজটিকে একটি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স হিসেবে গঠন করার জন্য যা কিছু করণীয় তা করার জন্য আমি ও আমার শিক্ষকবৃন্দ তৎপর রয়েছি।

বিডি২৪লাইভ: ধন্যবাদ স্যার।

অধ্যক্ষ: বিডি২৪লাইভকেও ধন্যবাদ।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: